Wednesday, September 18, 2019

বাড়ির চার পাশে যেসব গাছ লাগানো উত্তম

গাছ লাগানোর আগে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা জরুরী। পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং উর্বর জায়গা নির্বাচন করা উত্তম। লক্ষ্য রাখতে হবে বেলে মাটিতে গাছ ভাল জন্মে না। তাই বেলে মাটিতে গাছ লাগাতে চাইলে বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন।



বাড়ির উত্তর পাশেঃ- বাড়ির উত্তরে বড় গাছপালা থাকলে ঝড়ো বাতাস থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। তাই বড় এবং শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ উত্তরে লাগানো উচিৎ। যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম, মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমনি, বাঁশ, তেঁতুল, পিতরাজ ইত্যাদি।


বসতবাড়ির দক্ষিণেঃ- দক্ষিণ পাশে বড় আকারের গাছ লাগালে বাড়িতে সূর্যের আলো বাতাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বাড়ি হয় অন্ধকারোচ্ছন্ন স্যাঁতসেতে। তাই বাড়ির দক্ষিণে ছোট আকারের কম ঝোপ ঝাড় বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। যেমন- সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদী প্রভৃতি।


 
বাড়ির পূর্ব-পশ্চিম পাশেঃ- মাঝারি আকারের মধ্যম ঝোপালো গাছ লাগানো ভাল। এতে বাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়ে এবং আলো বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। পূর্ব-পশ্চিমে লাগানোর উপযুক্ত গাছ হল কুল, সফেদা, আম, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, শরিফা, গাব, কামরাঙ্গা, পেয়ারা ইত্যাদি।


রাস্তার পাশেঃ- রাস্তা দুই পাশে উঁচু শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। রাস্তার ধারে যেসব গাছ লাগানো হয় সাধারণত মাঝে মাঝে ডালপালা ছাটাই করা হয়। তাই ছাটাই সহ্য করতে পারে এমন গাছই নির্বাচন করতে হবে। যেমন-মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, তাল, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিল ইপিল, শিমুল, মান্দার, রেইনট্রি, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিরীষ, অর্জুন, সোনালু ইত্যাদি।  

গ্রামের কাঁচা রাস্তা দু পাশে লাগানো যেতে পারে শিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিল ইপিল, খেজুর, তাল প্রভৃতি গাছ।

পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন



- ইউক্যালিপটাস। কারণ অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী, নিম্নমানের কাঠ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
- রেইন-ট্রি। কারণ এই আগ্রাসী গাছ অন্য গাছকে বাড়তে দেয় না, ঝরা পাতা ফসল ও মাছের জন্য ক্ষতিকর, কাঠও নিম্নমানের।
- মেহগনি। এর ফল বিষাক্ত। পুকুরের পানিতে পড়লে মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অত্যধিক রোপিত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই।
- শিশু। কারণ এর কাঠ মাঝারি মানের, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।
- একাশিয়া। কারণ এর মাইক্রোস্কোপিক রেণু অ্যালার্জি/অ্যাজমার অনুঘটক, কাঠ মাঝারি মানের, গঠন আঁকাবাঁকা, বাংলাদেশে অতিরিক্ত রোপিত।

Sunday, September 15, 2019

বৃক্ষ রোপণ করি সবুজ বাংলাদেশের জন্য

গাছ লাগান দেশ বাঁচান’। যানবাহনের গায়ে ও বন বিভাগের অফিসের দেয়ালে লেখা এ স্লোগানটি প্রায়শ চোখে পড়লেও দেশের সরকারি বনাঞ্চল দিন দিন ন্যাড়া হচ্ছে। তথাপি দেশের মানুষ আগের চেয়ে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে উৎসাহিত হচ্ছে, যা একটি ইতিবাচক সাফল্য। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ এমনিতে কম, তার ওপর প্রতিবছর আবাসনের জন্য আবাদি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। তাই গাছ লাগানোর আগে কী জাতের গাছ লাগালে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ সহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সহায়ক হবে সে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। বর্ষা এলেই গাছ লাগানোর কথা আমরা অনেকেই ভাবি। কেউ বা বসতবাড়ির ভিটায় একটি বনজ, ফলদ কিংবা একটি ঔষধি গাছ অথবা বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষ বাগান অথবা জমির আইলে বা পুকুর পাড়ের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন জাতের কাষ্টল উদ্ভিদ বা ফলদ-ঔষধি গাছ রোপণের ব্যাপারে সচরাচরই আমরা বলাবলি করি। কোন অঞ্চলের আয়তনের পরিবেশগত ভারসাম্যে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কেবলমাত্র ৭% বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ হানিকর গাছ লাগানো হলে ও সুফলের চেয়ে কুফল বয়ে আনবে। যেমন ইউকেলিপটাসসহ, একাশিয়া, আকাশমণি, মিজ্জাম, শিশু, মেহগনি, রেইনট্রি ইত্যাদি বিদেশি জাতের গাছ আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী নয়। এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব গাছ অতিরিক্ত পানি পোষণসহ ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটিকে শুষ্ক, অনুর্বর ও মরুময় করে তোলে। পুকুর পাড়ে লাগালে মাছ চাষ ব্যাহত হওয়াসহ পানিকে দূষিত করে। এসব গাছের নির্গত গ্যাসে বাতাস বিষাক্ত হওয়াতে আশেপাশে দেশীয় ফলের গাছে ফলধরা হ্রাস পাওয়াসহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সব গাছে পাখি পর্যন্ত বাসা বাঁধে না। মোদ্দাকথা, সীমিত জায়গাতে শুধু কাঠের হিসেব করে বিদেশি জাতের গাছ লাগানোতে হীতে বিপরীত হয়ে দেখা দিচ্ছে, যার জন্য একদিন আফসোস করতে হবে। তাই প্রস্তাব হচ্ছে_
১. কাঠ এবং ফল একই বৃক্ষ থেকে পাওয়া যাবে এমন দেশীয় জাতের গাছ লাগান, যা আমাদের আবহমান বাংলার চিরন্তন প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করবে।
২. ভেষজ ঔষধি গাছ লাগান যাতে আমাদের ভেষজ ঔষধ শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হবে।
৩. দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশ সহায়ক দেশীয় জাতের কাঠের গাছ লাগান।
৪. বনজ বৃক্ষের উপযুক্ত স্থান বনাঞ্চল তাই বনাঞ্চলে বনজ বৃক্ষ রোপণ করুন, আর সমতলে ফলের গাছ।
৫. জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে খাদ্য, পুষ্টি প্রভৃতি চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে কাঠের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। কারণ আমাদের ভূমি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।