[আমি এই নিবন্ধটি ১৯৯০ সালে আমার স্কুলের ওয়াল ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছিলাম । প্রথমে এটা দেওয়ালেই ছিল । ছেলেরা পড়তো আর বলতো আমরাও ডাকটিকেট সংগ্রহ করবো । পরবর্তীতে স্কুলের বার্ষিক স্মরণীকাতে নিবন্ধটি ছাপা হয় । তখন আমি স্কুল ছেড়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি । এখনো আমি ডাকটিকেট সংগ্রহকারী । আশা করি আমার এই নিবন্ধটি আপনাদের ভালো লাগবে । ]
ডাকটিকেট সংগ্রহ বিশ্বে শখের রাজা হিসাবে স্বীকৃত এবং পৃথিবীতে যত শখ আছে তার মধ্যে সব চাইতে দামী শখ হচ্ছে- ডাকটিকেট সংগ্রহ। ডাকটিকেট সংগ্রহ শুধু সাধারণ মানুষের শখই নয় বরং বিশ্বের অনেক বড় বড় রাজা-রাণীর এ শখ ছিল এবং বর্তমানেও আছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইংল্যাণ্ডের রাজা ৫ম জর্জ। ডাকটিকেট সংগ্রহ কেন মূল্যবান শখ তা একটি উদাহরণ থেকেই বোঝা যাবে। উদাহরণটি হল- ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিনস রাজ্যের ওয়েলস্ কোম্পানী মরিসাস (Mauritius)- এর একটি দুর্লভ এবং ছাপায় ভুল হয়ে যাওয়া ডাকটিকেট একটি খামসহ ২ লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট হতে ক্রয় করেন। ঠিক এমনই একটি ডাকটিকেট রাজা পঞ্চম জর্জ ১৪৪০ পাউন্ড (ষ্টালিং)-এ ক্রয় করেন। সুতারং ডাকটিকেট সংগ্রহ হলো মূল্যবান শখ গুলোর অন্যতম।
কখন থেকে ডাকটিকেট সংগ্রহ মানুষের শখ হয়ে দাঁড়ায় তার সঠিক তথ্য আজও অজানা। ১৮৪০ সালের ৬ই মে ইংলেল্যাণ্ডের এক ভূগোল শিক্ষক স্যার রিওল্যাণ্ড হিল (Sir Rowland Hill)-এর চেষ্টায় ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট এক পেনি মূল্যের আয়তাকার কালো রং-এর ডাকটিকেট প্রকাশ করে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে ডাকটিকেটের আকৃতি এবং রং বদলে গেছে।তখনকার ডাকটিকেট আজকের ডাকটিকেটের মতো ছিদ্রযুক্ত ছিল না ছিদ্রযুক্ত ডাকটিকেটের প্রবর্তন হয় ১৮৫৪ সালে।
ডাকটিকেটের প্রথম প্রকাশকারী দেশ হিসাবে ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট আজও দেশের নাম (England) ছাপা হয় না। এ ব্যাপারটি ১৮৪০ সাল হতে চলে আসছে। তখন মানুষ ডাক মাশুল হিসাবেই ডাকটিকেট ক্রয় করতে না। ঘর সাজাবার জন্যও ক্রয় করত। এজন্য তাদেরকে ডাকটিকেট সংগ্রাহক বললেও ভুল হবে না। অনেকে ডাকটিকেট সংগ্রহকে হেয়ালী প্রকল্প এবং পাগলামী কাণ্ড বলে উপাধি দিলেও এটি একটি শিক্ষার মাধ্যমও বটে। অনেক ছোট খাট ডাকটিকেট এর সত্যতা প্রমাণ করে।
নিম্নের ডাকটিকেটগুলো বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এগুলোতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আবার বিশ্বে ডাকটিকেট বিদ্যা (Philately ফিলাটেলি) নামে একটি আলাদা বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ডাকবিভাগে চাকুরী পাচ্ছে। একটি ডাকটিকেট হতে সর্বপ্রথম অজানা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম (যথাঃ ভানুয়াত Vanuatu), উপনিবেশ (যথাঃ- ফ্রান্স গিয়ানা- GUYANA FRANCAISE), কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের পুরাতন নাম (যথাঃ- নামিবিয়ার পুরাতন নাম ছিল-উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা), কোন স্বাধীন দেশের সরকারী নাম লিবিয়া (সরকারী bvg-Socialist Peoplies Libyan Arab Jamahiriya) এবং কোন স্বাধীন দেশের বিশেষ অংশ ও রাজ্যের নাম (যথাঃ- আরব আমিরাত U.A.E এর একটি রাজ্য দুবাই) - এর নাম জানা যায়। তারপর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্হান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বীক কাহিনী জানা যায়। আবার অনেক দেশের বেশ কিছু ডাকটিকেট মুদ্রা হিসাবে (কয়েন স্ট্যাম ) ব্যবহার হয়। আবার অনেক দেশের ডাকটিকেট হতে সে সব দেশের জাতীয় সংগীত এবং জনপ্রিয় গানের সুর বাজানো যায়- অনেকটা বলা যায় একপ্রকার বাদ্য যন্ত্রের মতো। এসব ডাকটিকেটে টোকা দেওয়ার সাথে সাথে গানের সুর ধ্বনিত হয়। এ ধরণের ডাকটিকেট দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভূক্ত দেশ ভুটান (Bhutan) বের করেছে। উল্লেখ্য যে, ভুটান ডাকটিকেট রপ্তানীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে অনেক উন্নত।
জেনে রাখা উচিত ডাকটিকেট শুধু চারকোনাই হয় না। আবার ত্রিভুজ পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ, অষ্টভুজ, ট্রাপিজিয়ামের মতো, তাসের হরতনের মতো, পানের পাতার মতো, এমনকি একটা দেশের ম্যাপের মতোও ডাকটিকেটের আকার হতে পারে। আবার ডাকটিকেট শুধু কাগজেই মুদ্রিত হয় না বরং খাঁটি সোনা-রূপা দিয়েও তৈরী হয়। এ পর্যন্ত বিচিত্র সব আকার এবং প্রকারের ডাকটিকেট সবচেয়ে বেশী বের করেছে ভুটান । বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডাকটিকেট তৈরীতে ভুটান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। তার সাথে জানা উচিত বিশ্বের ছোট ও বড় ডাকটিকেট যথাক্রমে বলিভিয়া এবং সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৮৬৩ এবং ১৯৬২ সালে।
স্যার জন রিওল্যাণ্ড হিল যদিও ডাকাটিকেট বের করায় অবদান রাখেন, তার চাইতে বেশী অবদান হচ্ছে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট অগাষ্টিন সিজারের। ডাক ব্যবস্থা প্রবর্তনে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। আবার ডাক ব্যবস্থার বিকাশ লাভ করে ওসমানীয় খলিফাগণের হাতে । ডাকটিকেট সংগ্রহ করে অনেক কিছু জানা যায়। তা আগেই বিস্তারিতভাবে লিখেছি। ওহ! এত্ত সব লিখতে লিখতে একটি কথা ভুলে গেছি, তা হলো- গ্রীস এক সময় এমনসব ডাকটিকেট বের করেছিল যাতে ইশপের গল্প মুদ্রিত ছিল। যারা গল্প শুনতে এবং পড়তে ভালবাসেন তাদের জন্য তা খুবই মজার। আবার যারা ফুল-ফল এবং পশু-পাখী পছন্দ করেন তারা ডাকটিকেট সংগ্রহ করে এসম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেন এবং অবসর সময়কে স্বার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারেন ।
০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৪১
ডাকটিকেট সংগ্রহ বিশ্বে শখের রাজা হিসাবে স্বীকৃত এবং পৃথিবীতে যত শখ আছে তার মধ্যে সব চাইতে দামী শখ হচ্ছে- ডাকটিকেট সংগ্রহ। ডাকটিকেট সংগ্রহ শুধু সাধারণ মানুষের শখই নয় বরং বিশ্বের অনেক বড় বড় রাজা-রাণীর এ শখ ছিল এবং বর্তমানেও আছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইংল্যাণ্ডের রাজা ৫ম জর্জ। ডাকটিকেট সংগ্রহ কেন মূল্যবান শখ তা একটি উদাহরণ থেকেই বোঝা যাবে। উদাহরণটি হল- ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিনস রাজ্যের ওয়েলস্ কোম্পানী মরিসাস (Mauritius)- এর একটি দুর্লভ এবং ছাপায় ভুল হয়ে যাওয়া ডাকটিকেট একটি খামসহ ২ লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট হতে ক্রয় করেন। ঠিক এমনই একটি ডাকটিকেট রাজা পঞ্চম জর্জ ১৪৪০ পাউন্ড (ষ্টালিং)-এ ক্রয় করেন। সুতারং ডাকটিকেট সংগ্রহ হলো মূল্যবান শখ গুলোর অন্যতম।
কখন থেকে ডাকটিকেট সংগ্রহ মানুষের শখ হয়ে দাঁড়ায় তার সঠিক তথ্য আজও অজানা। ১৮৪০ সালের ৬ই মে ইংলেল্যাণ্ডের এক ভূগোল শিক্ষক স্যার রিওল্যাণ্ড হিল (Sir Rowland Hill)-এর চেষ্টায় ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট এক পেনি মূল্যের আয়তাকার কালো রং-এর ডাকটিকেট প্রকাশ করে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে ডাকটিকেটের আকৃতি এবং রং বদলে গেছে।তখনকার ডাকটিকেট আজকের ডাকটিকেটের মতো ছিদ্রযুক্ত ছিল না ছিদ্রযুক্ত ডাকটিকেটের প্রবর্তন হয় ১৮৫৪ সালে।
ডাকটিকেটের প্রথম প্রকাশকারী দেশ হিসাবে ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট আজও দেশের নাম (England) ছাপা হয় না। এ ব্যাপারটি ১৮৪০ সাল হতে চলে আসছে। তখন মানুষ ডাক মাশুল হিসাবেই ডাকটিকেট ক্রয় করতে না। ঘর সাজাবার জন্যও ক্রয় করত। এজন্য তাদেরকে ডাকটিকেট সংগ্রাহক বললেও ভুল হবে না। অনেকে ডাকটিকেট সংগ্রহকে হেয়ালী প্রকল্প এবং পাগলামী কাণ্ড বলে উপাধি দিলেও এটি একটি শিক্ষার মাধ্যমও বটে। অনেক ছোট খাট ডাকটিকেট এর সত্যতা প্রমাণ করে।
নিম্নের ডাকটিকেটগুলো বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এগুলোতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আবার বিশ্বে ডাকটিকেট বিদ্যা (Philately ফিলাটেলি) নামে একটি আলাদা বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ডাকবিভাগে চাকুরী পাচ্ছে। একটি ডাকটিকেট হতে সর্বপ্রথম অজানা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম (যথাঃ ভানুয়াত Vanuatu), উপনিবেশ (যথাঃ- ফ্রান্স গিয়ানা- GUYANA FRANCAISE), কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের পুরাতন নাম (যথাঃ- নামিবিয়ার পুরাতন নাম ছিল-উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা), কোন স্বাধীন দেশের সরকারী নাম লিবিয়া (সরকারী bvg-Socialist Peoplies Libyan Arab Jamahiriya) এবং কোন স্বাধীন দেশের বিশেষ অংশ ও রাজ্যের নাম (যথাঃ- আরব আমিরাত U.A.E এর একটি রাজ্য দুবাই) - এর নাম জানা যায়। তারপর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্হান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বীক কাহিনী জানা যায়। আবার অনেক দেশের বেশ কিছু ডাকটিকেট মুদ্রা হিসাবে (কয়েন স্ট্যাম ) ব্যবহার হয়। আবার অনেক দেশের ডাকটিকেট হতে সে সব দেশের জাতীয় সংগীত এবং জনপ্রিয় গানের সুর বাজানো যায়- অনেকটা বলা যায় একপ্রকার বাদ্য যন্ত্রের মতো। এসব ডাকটিকেটে টোকা দেওয়ার সাথে সাথে গানের সুর ধ্বনিত হয়। এ ধরণের ডাকটিকেট দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভূক্ত দেশ ভুটান (Bhutan) বের করেছে। উল্লেখ্য যে, ভুটান ডাকটিকেট রপ্তানীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে অনেক উন্নত।
জেনে রাখা উচিত ডাকটিকেট শুধু চারকোনাই হয় না। আবার ত্রিভুজ পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ, অষ্টভুজ, ট্রাপিজিয়ামের মতো, তাসের হরতনের মতো, পানের পাতার মতো, এমনকি একটা দেশের ম্যাপের মতোও ডাকটিকেটের আকার হতে পারে। আবার ডাকটিকেট শুধু কাগজেই মুদ্রিত হয় না বরং খাঁটি সোনা-রূপা দিয়েও তৈরী হয়। এ পর্যন্ত বিচিত্র সব আকার এবং প্রকারের ডাকটিকেট সবচেয়ে বেশী বের করেছে ভুটান । বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডাকটিকেট তৈরীতে ভুটান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। তার সাথে জানা উচিত বিশ্বের ছোট ও বড় ডাকটিকেট যথাক্রমে বলিভিয়া এবং সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৮৬৩ এবং ১৯৬২ সালে।
স্যার জন রিওল্যাণ্ড হিল যদিও ডাকাটিকেট বের করায় অবদান রাখেন, তার চাইতে বেশী অবদান হচ্ছে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট অগাষ্টিন সিজারের। ডাক ব্যবস্থা প্রবর্তনে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। আবার ডাক ব্যবস্থার বিকাশ লাভ করে ওসমানীয় খলিফাগণের হাতে । ডাকটিকেট সংগ্রহ করে অনেক কিছু জানা যায়। তা আগেই বিস্তারিতভাবে লিখেছি। ওহ! এত্ত সব লিখতে লিখতে একটি কথা ভুলে গেছি, তা হলো- গ্রীস এক সময় এমনসব ডাকটিকেট বের করেছিল যাতে ইশপের গল্প মুদ্রিত ছিল। যারা গল্প শুনতে এবং পড়তে ভালবাসেন তাদের জন্য তা খুবই মজার। আবার যারা ফুল-ফল এবং পশু-পাখী পছন্দ করেন তারা ডাকটিকেট সংগ্রহ করে এসম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেন এবং অবসর সময়কে স্বার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারেন ।
০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৪১
No comments:
Post a Comment