Wednesday, July 11, 2012

সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ

আজ আমি প্রথম ব্লগ পোস্ট করছি । আমার পোস্টকৃত নিবন্ধটি আমার লেখা নয় । কিন্তু এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় নিবন্ধ । তাই সবার সাথে শেয়ার করছি । গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি । ধন্যবাদ সবাইকে। উৎস : দৈনিক ইনকিলাব ১৯৮৮ ইং আগস্ট রোজ বৃহস্পতিবার ১৪০৯ হিজরী লেখক : মাওলানা ড.আবদুল্লাহ আল-মারুফ মুহাম্মদ শাহ আলম উপপরিচালক,ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এম, এম, এম, এফ (ফাস্ট ক্লাস ফার্স্ট) লিসান্স. (ডিসইটস্ককশন) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা মুনাওয়ারাহ [সত্য প্রতিষ্ঠা ও সত্য অন্বেষার ক্ষেত্র সুবিস্তৃত। অনুসন্ধান, গবেষণা এবং যথার্থ বিশ্লেষণের আলোকে মূল সত্যে উপনীত হওয়ার কালজয়ী অনুপ্রেরণা ও মত বিনিময়ের শুভ সূচনার লক্ষ্যেই আমরা এই প্রবন্ধটি উপস্থাপিত করছি। গবেকগণ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন, এটাই আমাদের কামনা । ( বিভাগীয় সম্পাদক : ইনকিলাব) ইসলাম সমগ্র মানবতার একমাত্র দ্বীন। সেজন্য এর আচার-অনুষ্ঠানগুলোও বিশ্বজনীন। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে এই সব ইবাদত অনুষ্ঠাগুলো। রমজানের সিয়াম সাধনা এর অন্যতম। আল-হেলাল বা নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীতে রমজান এসে গেছে। বিশ্বময় এ মেহমানের আগমনে সাড়া পড়ে যায়। কারণএ নতুন চাঁদটি যে বিশ্বের সবার জন্য। আল্লাহ তায়ালার কালামে রয়েছে- “হে নবী ! আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলে দিন, এটা সকল মানবমণ্ডলীর জন্য চিরস্থায়ী ক্যালেণ্ডার এবং হজ্বের সময় নির্ধারক।” ২/১৮৯ হাদীস শরীফে এ সম্পর্কে অনেকগুলো সমর্থক রেওয়াতে এসেছে যেমন- নতুন চাঁদ দেখে সওম আরম্ভ কর আর তা দেখেই ঈদ কর। যদি আকাশ আচ্ছন্ন থাকে তাহলে ৩০ দিন পুরা কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- সময়কে নিধারণ কর। (বুখারী ও মুসলিশ) হাদীসে যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতকে ব্যাপকভাবে সম্বোধন করেছেন নতুন চাঁদের উদয়ের স্থান কাল ও কোন দেশ বা জাতি নির্বিশেষে এ নির্দেশ আরোপিত হয়েছে। এজন্যই এ হাদীসটিকেই মাজহাবের ইমামগণ সারা দুনিয়ায় এক হুকুম-এর সুদৃঢ় ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রাঃ), ইমাম মালেক (রাঃ), ইমাম আহমদ (রাঃ) ও প্রখ্যাত আলেমগণ এ হাদীসের সম্বোধন ব্যাপক ও বিশ্বজনীন হওয়ার যুক্তিতেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পৃথিবীর এক প্রান্তে প্রথম চাঁদ দেখা যায় তাহলে অন্য প্রান্তে সে খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত হলে তাদের উপরও একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ করা ফরজ। কারণ নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে। (উপরোক্ত বক্তব্য প্রমাণের জন্য দেখুনঃ সিয়াম অধ্যায়- ফাতাওয়া, শামী, আলমগীরি, মারাকিউল ফালাহ, বাহ্রুর রায়েক, কাজীখান, ফাতহুল কাদীর, বাজাজিয়াহ, আল ইখতিয়ার, আল-ফিকহুল ইসলামী। মালেকী মাজহাবের আল-মনুতাকা, শরহে জুরকানী, আশ সরহুছ ছগীর, ফাতহুর রাহীম, হাম্বলী মাজহাবের- মুগনী, রওদুন নাদী, জাদুল মুসতাকান, আস-আলসাবীল ফি মারেফাতিদ দালীল, আল-কাফী আল-মুর্হারের ইত্যাদি কিতাব) কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে নতুন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরের যুক্তি নতুন চাঁদ দেখে রোজা রাখ, নতুন চাঁদ দেখে ভাঙ্গ। প্রশ্ন হচ্ছে , কারা দেখবে? বিশ্বের সকল রোজাদারকেই কি নতুন চাঁদ দেখতে হবে ? না, কিছু লোক দেখলেই চলবে। সে কিছু কতজন কমপক্ষে? আবার তারা, কি প্রত্যেক দেশের হতে হবে, না কি কোন এক দেশের কেউ হলেই চলবে। ইত্যাকার প্রশ্নদির জওয়াব উপরোক্ত হাদীসেই রয়েছে- সম্বোধন যেহেতু আ’ম (ব্যাপক) কাজেই যে কোন দেশের কেউ দেখলেই হবে। রমজান শুরুর বেলায় মেঘলা আকাশে চাঁদ দেখা গেছে বলে, একজন সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণীয় অবশ্য সমাপ্তির বেলায় কমপক্ষে দু’জন সাক্ষী লাগবে। আর আকাশ পরিস্কার থাকলে কয়েকজন সাক্ষীর দরকার হবে। তবে নির্দিষ্ট কোন দেশের লোক হওয়া শর্ত নয়। প্রথম দেখাই হল বড় কথা । আমরা হানাফী মাজহাবের হয়েও এতকাল যাবত শাফেয়ী মাজহাবের অনুকরণে স্থানীয় দেখার উপর ঈদ, রোজা করে আসছিলাম ওজরের কারণে। কিন্তু দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যম আবিষ্কৃত ও সহজ লভ্য হবার কারণে বহু পূর্বেই সে ওজর দূর হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তবুও আমরা অবচেতনভাবে আগের মত করে যাচ্ছি। অনেক আলেম তো রেডিও - টিভিকে যাদুর বাক্স বলেই দায়িত্ব সেরে ফেলেছেন। অনেকের ধারণা, নতুন করে করতে গেলে ফেতনা বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফরজ সিয়াম ও ওয়াজিব ঈদ যদি সঠিকভাবে কারার পদক্ষেপকে ফেতনা বলেন, তাহলে ফেতনা জিনিসটা কি জানতে ইচ্ছে হয়। সরকারীভাবে উদ্যোগ নিলে তো আর এ ধরনের মতানৈক্যের প্রশ্ন উঠতো না। ঢাকায় ১৮৮৩ সালে ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ওআইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, অভিন্ন তারিখে গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসলামী ইবাদত অনুষ্ঠানগুলো করা হবে। তখন ইস্তাম্বুল ভিত্তিক হেলাল কমিটি এসে রিপোর্টও দেন যে, সারা বিশ্বের আলেমদের মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে, একই দিনে সারা বিশ্বে রোজা আরম্ভ ও ঈদ করাই শরীয়তের বিধান এবং তা আধুনিক বেতার যুগে পালন করা সম্ভব। কিন্তু কই অন্যান্য বিষয়ের মত ইসলামের এ রুকনটিও কাণ্ডজে সিদ্ধান্তই রয়ে গেল। সত্যি কথা বলতে কি এটা এখন আমাদের জাতীয় সমস্যা। হানাফী মাজহাবে যে সিদ্ধান্ত রয়েছে তা গ্রহণ করে বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বের সাথে প্রথম হেলাল-দর্শনকে ভিত্তি করে একই দিন রোজা শুরু করে একই দিন ঈদ পালন করলে একদিকে যেমন কিতাব অনুযায়ী আমল হবে অন্যদিকে এক উম্মাহ্ চেতনা আরো জোরদার হবে। বর্তমানে আমরা যেভাবে রোজা ও ঈদ পালন করছি এটা শাফেয়ী মাজহাবের মতে হচ্ছে। এমনকি শাফেয়ী মাজহাব যে ৪৮০ মাইলকে একটি হেলাল-দর্শনের আওতা বলে রায় দিয়েছেন । অভিন্ন পাকিস্তান আমলে লাহোর-পিণ্ডিতে চাঁদ দেখলে পূর্ব-পাকিস্তানেও ঈদ করা হতো। এখন কখনো কখনো তারা আমাদের ১ দিন আগে ঈদ করে যাচ্ছে। সন্দেহ নিরসনের জন্য বলতে হয় হানাফী মাজহাবসহ তিনটি মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো :নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে। দেশে দেশে সময়ের যে ব্যবধান তাতে ২৪ ঘন্টার (১ দিনের) পার্থক্য হয় না। স্থানীয় সময়কে অনুসরণ করলেই সর্বোচ্চ ১১ ঘন্টার ভিতর পুরো বিশ্বে মুসলিম বিশ্বে (ইন্দোনেশিয়া হতে মরক্কো পর্যন্ত) ঈদ করা যায়। তেমনি রোজাও রাখা যায়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়- ধরুন একই দিনে জুমা ও ঈদ হলো। এখন আমরা সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ পড়লাম ১টার সময় জুমা আদায় করলাম। সৌদি আরব আমাদের তিন ঘন্টা পর ঈদ ও জুমার নামাজ আদায় করল। যুক্তরাষ্ট্র করল বার ঘন্টা পর । আমরা টিভিতে দেখি আজ আরাফাতে হজ্ব হচ্ছে, কিতাব মতে কালই তো ঈদ হবে। কিন্তু আসলে আমরা করি ১/২ দিন পর। আমরা যে আলাদা হিসেবে ১০ তারিখে ঈদ করব সে আলাদা হিসেবের স্বীকৃতিই তো হানাফী মাজহাবে নেই। কোন ঠেকার কারণে শাফেয়ী মাজহাব পালন করতে যাচ্ছি আমরা? অনেকে নামাজের সাথে রোজাও তুলনা করেন। এটা ঠিক নয়। কারণ নামাজ ফরজ হয় এবং আদায় করা হয় সূর্যের উদয় অস্ত দিয়ে । রোজ শুরু কিন্তু হয় চন্দ্র দিয়ে, আদায় করা হয় সূর্যের উদয় অস্ত দিয়ে। সচেতন পাঠকগণ বুঝে নিবেন। সীমিত পরিসরে বিস্তারিত বলার অবকাশ নেই। পরিশেষে, বাংলাদেশ সরকার, মুহাক্কেক আলেমগণ ও সচেতন শিক্ষিত নাগরিকদের কাছে অনুরোধ- হানাফী মাজহাব অনুসারে যাদে আমরা রোজা শুরু করতে পারি এবং বিশ্বে সর্বপ্রথম চাঁদ দেখাকে অনুসরণ করে সঠিকভাবে ঈদ পালন করতে পারি সেজন্য এগিয়ে আসুন। বিবেক বিবাগী বলেছেন: এটা জটিল ব্যাপার। এখন জাপান আর আমেরিকার মাঝে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা না হয়ে প্রতি মাসে নতুন চাঁদ ওঠার স্হানকে প্রথম ধরে যদি পৃথিবীতে নতুন মাস আসার ঘোষণা কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলিমরা করতো, সেটাই বেস্ট হত। ইসলামে তো এত এত দেশ হবার কথাই ছিল না। একই খিলাফতে আন্ডারে থাকা উচিৎ ছিল। এক্ষেত্রে রাত থাকতেই থাকতেই যদি চাঁদ ওঠার খবর পাওয়া যায়, তবে ঐ চাঁদকেই ফলো করা উচিত, সেটা যেখানেই হোক না কেন। আমাদের চাঁদ দেখা কমিটি তো আর চাঁদ দেখে না, চাঁদ দেখতে পাওয়া গেছে, এই খবর সংগ্রহ করে। এখন কে বুঝাবে আলেমদের। বড় কঠিন কাজ। সরকার ও জনগণের দুষ্টচক্রে এই ব্যাপারটা আমাদের দেশে ইনকর্পোরেট করা খুবই কঠিন। মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে একমত । আমাদের সবাইকে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং আমাদেরকেই ও.আই.সি-র ”অভিন্ন তারিখে গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসলামী উৎসবগুলো করা”-র প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে জনমত সৃষ্টি করতে হবে । আপনাকে ধন্যবাদ http://m.somewhereinblog.net/blog/fakhrul78/29425790

No comments:

Post a Comment