Wednesday, July 11, 2012

বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ হওয়া ও.আই.সি -র সিদ্ধান্ত বিরোধী

বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ হওয়া ও.আই.সি -র সিদ্ধান্ত বিরোধী




৩০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ২:৪৯

 রোজা কোন সাধারন ইবাদত নয় । এটি ইসলামের স্তম্ভ হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম । ইসলামী পন্জিকার মাসগুলো ২৯ ও ৩০ দিনে হয় । কোনভাবেই ২৮,৩১ ও ৩২ দিনে মাস হওয়ার সুযোগ নেই । কিন্তু বিশ্বব্যাপী রোজার সময় আমরা বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী ২৮ ও ৩১ দিনের রমজান মাস হতে দেখি এবং ২৮ হতে ৩১ দিনে রমজান মাস শেষ করে বিশ্বব্যাপী ঈদুল ফিতর চার দিন ধরে পালন করার রেওয়াজ গড়ে ওঠেছে ।


এ বিশৃঙ্খল অবস্হা সম্পর্কে ১৬ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে এক প্রেস রিলিজে ৫৭টি দেশ নিয়ে গঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্হা (ও.আই.সি) –এর মান্যবর মহাসচিব একমেলেদ্দীন ইহসানোগলু বলেন,’’ এবছর (২০০৬) ঈদুল ফিতর ঈদুল ফিতর উদযাপনে সময়ের পার্থক্য ৩ দিন পৌছেছে । আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষত: জ্যোতির্বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতির যুগে এই অবস্হা দু:খজনক । ইসলামী উৎসবগুলোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে । এসব উৎসব বিশ্বের সব মুসলিমের হৃদয়ে ঐক্যের বার্তা পৌছে দেয় । এই ঐক্য এসব উৎসবের নির্যাস হিসেবে প্রকাশ পায় । কিন্তু এসব উৎসব বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের বদলে অনৈক্য ও বিভেদের উপলক্ষ্য হিসেবে উপস্হিত হয়েছে । এতে মুসলিমদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে না । এটি একটি বড় ধরনের ভুল । কারণ এসব ধর্মীয় উৎসব ধর্মের বস্তুনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরে যেয়ে একঘেয়েমি ও কুপমন্ডুকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে । এব্যাপারে ইসলামী সম্বেলন সংস্হা (ও.আই.সি) ১৯৮০ -র দশক হতে লিখিতভাবে এবিষয় নিয়ে সোচ্চার । ও.আই.সি এবিষয়ের উপর প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন সম্বেলনে এবিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে ।মুসলিম দেশগুলোতে একটি একক ক্যালেন্ডার অবলম্বন করার জন্য হিজরী ক্যালেন্ডারকে ধর্মীয় ও বিজ্ঞানের মুলনীতি প্রয়োগ করে পরিমার্জিত করতে হবে । এব্যাপারে ব্যবস্হা নিতে ইসলামী আইনবিদ্যা কেন্দ্রকে অনুরোদ করছি ।পরিমার্জিত এ হিজরী ক্যালেন্ডার বিশ্বের সব মুসলিমকে রোজা ও অন্যান্য উৎসবগুলোতে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবে । এবিষয়ে বিভক্তি ও অনৈক্য দুর করতে মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় ও নেতৃস্হানীয় কর্তাব্যক্তিদের এক সাথে কাজ করতে আহবান জানাচ্ছি । জেদ্দা : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ “ ( দেখুন: 
ও.আই.সি-র ওয়েবসাইট )


বিশ্বব্যাপী চার দিন ধরে মুসলিম উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণসমূহ :

 বিশ্বব্যাপী চার দিন ধরে মুসলিম উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণসমূহের একটি প্রধান কারণ হলো – হিজরী সন গণনা কৌশলের ভিন্নতা এবং মুসলিম প্রধান ও সংখ্যালঘু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সমান্নয়হীনতা । দেশ অনুযায়ী হিজরী সন গণণা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে । যেমন :

১. দেশের রাজনৈতিক সীমার মধ্যস্হ স্হলভাগে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখার খবর প্রচার করে দেশে হিজরী সনের মাস শুরু করা । যেমন : বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ওমান,মরক্কো এবং ত্রিনিদাদ- টোবাগো ।

 ২.চাঁদের জন্ম ও মক্কায় সূর্যাস্তের পর চাঁদ অস্ত যাওয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য দিয়ে অগ্রিম ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা । বিশষে কোন কারণে কখনো রোজা ও হজের মাস এক দিন এগিয়ে আনা । যেমন : সৌদি আরব ।

৩.সৌদি আরবের ঘোষনা অনুসরন করা । যেমন : কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ।

৪.মাসের ২৯তম দিনে চাঁদের জন্ম ও সূর্যাস্তের ৫মিনিট পর চাঁদ অস্ত গেলে নতুন মাস শুরু করা । যেমন : মিসর ।

৫.পাশবর্তী দেশ হতে মাস শুরু করার খবর সংগ্রহ করা । যেমন : নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া হতে , মালদ্বীপ শ্রীলন্কা হতে খবর সংগ্রহ করে রোজা ও ঈদ করে ।

৬.বিশ্বে প্রথম মাস শুরুর ঘোষক দেশের অনুসরন করা । যেমন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশগুলো , জ্যামাইকা, বার্বাডোস

৭. চাঁদের বয়স, উচ্চতা, সূর্যাস্ত ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার সময়ের ব্যবধান বিবেচনা করে মাস শুরু করা । যেমন: আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া

৮.নিজস্ব ভুখন্ডে ফজরের আগে চাঁদের জন্ম বিবেচনা করে মাস শুরু করা । যেমন: লিবিয়া

৯.চাঁদের বয়স ৮ ঘন্টা, উচ্চতা ২ ডিগ্রী, কৌনিক ব্যবধান ৩ ডিগ্রী এর বেশী হলে মাস শুরু করা । যেমন: মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর 
 
১০. আগেই পাটীগণিতের সুত্র দিয়ে অগ্রীম পন্জিকা বানানো । যেমন : ইসমাইলিয়া ও কাদিয়ানী । মুলত এরা অমুসলিম জাতি । 

১১. আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে পরিচিত দুরর্বতী দেশকে অনুসরন । যেমন : মালয়েশিয়াকে জাপান, তাইওয়ান,কোরিয়া, পালাউ অনুসরন করে 

১২. বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানদন্দ ব্যবহার করা । যেমন: নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকার কিছু দেশ । 

১৩. বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার বা তার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা । যেমন: লেবানন 

১৪. ৪৮০ মাইল দূরত্বকে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্ন উদয় অঞ্চল বিবেচনা করে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখে একই দেশে দুই দিন মাস শুরু করা । যেমন: ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মনিপুর, গুজরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশ ।

১৫.বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম চাঁদের জন্ম এবং মক্কার সূর্যাস্তের পর চাঁদের অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে মাস শুরু করার ঘোষনা করা । এ পদ্ধতিতে বিশ্বের কোথাও না কোথাও নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা হয় তা খালি চোখেই হোক বা শক্তিশালী দুরবীন দিয়েই হোক। যেমন: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামী আইনবিদ পরিষদ এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফাতওয়া এন্ড রিচার্সের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা ও দেশসমূহ । (দেখুন: http://www.moonsighting.com/methods.html ) 

এধরনের ভিন্ন ভিন্ন মানদন্দের ভিত্তিতে মাস শুরুর করায় মুসলিম বিশ্বে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য তৈরী হয়েছে এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো সার্বজনীনতা ও ধর্মীয় তাৎপর্য হারাচ্ছে । এঅবস্হা এক সময় অন্যান্য ধর্মানুসারীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল ।কিন্তু তারা এঅবস্হা কাটিয়ে ওঠেছে । যেমন : খ্রীষ্টাব্দকে জুলিয়াস সিজার ও পোপ গ্রেগরী সংস্কার সাধন করলেও দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন তারিখ ব্যবহার হতো । ১৮৮৪ সালে এক আন্তজার্তিক সম্বেলনের মাধ্যমে খ্রীষ্টাব্দকে পরিমার্জিত করা হয় ।


সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার বিষয়ে ও.আই.সি এর বিভিন্ন প্রস্তাবএবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে । দেখুন http://www.oic-oci.org/home.asp ( ও.আই.সি-র ওয়েব সাইট ) ‌ ও.আই.সি ( ইসলামী সহযোগিতা সংস্হা ) - র অন্তর্ভুক্ত সদস্য দেশগুলোর পররাস্ট্র মন্ত্রীদের সম্বেলনে সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার জন্য গ্রহন করা প্রস্তাবের লিংক দেওয়া হল :

1. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/11/11 icfm-cultural-en.htm RESOLUTION No. 14/11-C ON THE DRAWING UP OF A UNIFORM LUNAR CALENDAR

2. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/12/12 icfm-cultural-en.htm RESOLUTION NO. 8/12-C THE ESTABLISHMENT OF A CALENDAR OF LUNAR MONTHS AND MUSLIM HOLIDAYS

3. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/13/13 icfm-cultural-en.htm RESOLUTION NO. 11/13-C ESTABLISHMENT OF A CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS

4. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/14/14 icfm-cult-en.htm RESOLUTION NO. 19/14-C ON THE STANDARDIZATION OF LUNAR MONTHS AND ISLAMIC HOLIDAYS

5. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/15/15 icfm-cult-en.htm RESOLUTION NO.17/15-C ON THE UNIFICATION OF THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND ISLAMIC HOLIDAYS

6. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/16/16 icfm-cult-en.htm RESOLUTION NO.13/16-C THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC FESTIVALS

7. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/17/17 icfm-cult-en.htm RESOLUTION NO. 16/17-C ON THE UNIFIED HEJIRA CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTH AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC FESTIVALS

8. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/18/18 icfm-cult-en.htm RESOLUTION 18/18-C ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC FESTIVALS

9. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/19/19 icfm-cult-en.htm RESOLUTION NO. 24/19-C ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC FESTIVALS

10. ISTANBUL, REPUBLIC OF TURKEY 24-28 MUHARRAM 1412H, 4-8 AUGUST 1991

11. Click This Link resolution.htm RESOLUTION NO.12/21-C UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC FESTIVALS

12. Click This Link RESOLUTION NO.13/22-C ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS

13. Click This Link RESOLUTION NO.15/23-C ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTH AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS

14. Click This Link RESOLUTION NO.16/24-C ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNING OF LUNAR MONTH AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS

15. Click This Link Resolution No. 16/25-C on the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

16.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/26/Resolutions26-C.htm Resolution No. 18/26C On the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

17.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/27/27th-fm-cultural.htm RESOLUTION NO. 18/27-C On the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

18.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/28/28-ICFM-CS1-en.htm Resolution No. 4/28-C On the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

19.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/29/29%20icfm-cult-e.htm Resolution No. 4/29-C On the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

20.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/30/30%20icfm-cul1-e.htm RESOLUTION NO. 4/30-C On the Unified Hijri Calendar for the Beginning of Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

21.http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/31/31%20icfm-main-e.htm ISTANBUL, REPUBLIC OF TURKEY 26-28 RABIUL THANI 1425H (14-16 JUNE 2004)

 22. Click This Link Page no: 7 The unified Hijri calendar for the beginnings of the Lunar Months and the Unification of Islamic Holidays.

23. Click This Link RESOLUTION NO. 1/33-C ON GENERAL CULTURAL MATTERS D) The Unified Hijri Calendar of the Islamic Holidays

24.http://www.oic-oci.org/34icfm/english/resolution/34ICFM--CS-RES-FINAL-ENG.pdf Page no: 3 The Unified Hijri Calendar

25.http://www.oic-oci.org/35cfm/english/res/35-CFM-RES-CUL-FINAL.pdf Page no: 6 The Unified Hijri Calendar

26.http://www.oic-oci.org/36cfm/w/en/res/36CFM-CS-RES-FINAL.pdf Page no: 4 The Unified Hijri Calendar

 27. Click This Link Resolution on The Unified Hijri Calendar : page no:7 28.http://www.oic-oci.org/38cfm/en/documents/res/CUL-RES-38-CFM-FINAL-2.pdf Resolution on The Unified Hijri Calendar . Page no: 6

 ও.আই.সি ( ইসলামী সহযোগিতা সংস্হা ) - র অন্তর্ভুক্ত সদস্য দেশগুলোর রাস্ট্র প্রধানদের নিয়ে করা ইসলামী সম্বেলনে সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার জন্য গ্রহন করা প্রস্তাবের লিংক দেওয়া হল :

1. Click This Link DOHA - STATE OF QATAR 16-17 SHABAN, 1421H 12-13 NOVEMBER, 2000 RESOLUTION NO. 18/9-C (IS) ON THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNINGS OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS

2. Click This Link PUTRAJAYA, MALAYSIA 20-21 SHA’BAN 1424H 16-17 OCTOBER 2003 d) THE UNIFIED HIJRI CALENDAR FOR THE BEGINNINGS OF LUNAR MONTHS AND THE UNIFICATION OF ISLAMIC HOLIDAYS 3. Click This Link DAKAR,SENEGAL 6-7 Rabiulawal 1429 H (13-14 March 2008) The unified hijri calendar, page 3


অর্থাৎ ও.আই সি তার প্রতিস্ঠার পর হতে সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করা এবং হিজরী সনকে সদস্য দেশগুলোতে সার্বজনীনভাবে ব্যবহার করার জন্য এর্যন্ত ৩১ বার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে । 

এজন্য এবিষয়ে ও.আই.সি ইসলামী আইনবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী , তথ্য প্রযুক্তিবিদ, আবহাওয়াবিদ এবং গণিতবিদদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে । 

এতে বাংলাদেশ জোড়ালো ভুমিকা পালন করেছে যার কারণ আমরা দেখি ১৯৮৩ সালের ৬ হতে ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ও.আই.সি-র সব সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৪ তম সম্বেলনে বাংলাদেশে একটা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর প্রস্তাব ( বর্তমানে এটি ও.আই.সি বানিয়ে ফেলেছে , দেখুন http://www.iutoic-dhaka.edu/ ) এবং সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ ও হিজরী ক্যালেন্ডার ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয় ( RESOLUTION NO. 19/14-C THE STANDARDIZATION OF LUNAR MONTHS AND ISLAMIC HOLIDAYS দেখুন : Click This Link NO. 19/14-C) ।

সুতরাং এক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভুমিকা রাখছে । বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশ এবং সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব মুসলিম সংগঠন ও, আই, সি-এর ফিকহ একাডেমী ১৯৮৬ সনের ১১-১৬ অক্টোবর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে শতাধিক শরীয়াহ্‌ বিশেষজ্ঞের সর্ব সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, “বিশ্বের কোন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলে সকল মুসলিমকে ঐ দেখার ভিত্তিতেই আমল করতে হবে।”



জ্যোতিষ শাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ

জ্যোতিষ শাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ



[ আমি এ নিবন্ধটি লিখেছিলাম ২০০৫ সালে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশনের ওয়ার্কশপের জন্য । এটি লিখতে মহাকাশ বার্তার বিভিন্ন সংখ্যা, বাংলাদেশের বিজ্ঞান চিন্তা, মহাবিশ্ব, Cosmos, Astronomy for kids প্রভৃতি বইয়ের সাহায্য নিয়েছি । বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্কাইভসে রক্ষিত বিশ্বকোষগুলোরও সাহায্য নিয়েছি । অনেকের কাছে বেশ কিছু অংশ কপি পেস্ট মনে হতে পারে । এক্ষেত্রে আমার অভিমত, এক্ষেত্রে আমি গবেষক না । গবেষণা করে এক্ষেত্রে নতুন তথ্য বা তত্ত্ব দিতে আমি অক্ষম । ]


 প্রাচীনকালে পুরোহিতদের মধ্যে সব ধরনের জ্ঞান-চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল। জ্যোতিষশাস্ত্রও ঠিক তেমনি পুরোহিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সুদীর্ঘ কাল ধরে প্রাচীন ইরাকী পুরোহিতদের আকাশমন্ডল পর্যবেক্ষন থেকেজ্যোতিষ-চর্চার সূত্রপাত হয় । আজ যে স্থানে আধুনিক ইরাক সেখানে গড়ে উঠেছিল সুমের, ব্যাবিলন, ক্যালডিয়া আর মেসোপটেমিয়া নামের বিভিন্ন দেশ। আর এসব দেশে আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে জ্যোতিষশাস্ত্রের উদ্ভব।


আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীকরা জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিভিন্ন বিধিবদ্ধ নিয়মের অধীনে আনেন। তাঁরা তারার জগতে সূর্যের আবর্তনের পথকে বারটি ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন দেব-দেবী ও বিমূর্ত-মূর্ত প্রানীদের নামে নামকরণ করেন। প্রথমে জ্যোতিষ শাস্ত্র রাজদরবারের বিষয়বস্তু হলেও পরে তা জনসাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের বিশ্বাস ও ধর্মীয় অনুভুতির সুযোগ ব্যবহার করে জ্যোতিষরা তাঁদের কল্পনাকে আকাশের ঘটনার সাথে পৃথিবীর ঘটনার সাথে মিলাতে থাকলেন। কারণ প্রাচীন কালের মানুষের বিশ্বাস ছিল দেব-দেবীদের নিয়ে সৃষ্টিকর্তা তাঁর স্বর্গে অবস্থান করছেন। আর দেব-দেবীরা সৃষ্টিকর্তার আদেশে তারার জগতে অবস্থান করছেন। যখন কোন আকাশে বিরল জ্যোতিস্ক আর্বিভূত হতো অথবা ঘটতো সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহন,তখন এসব দূর্লভ ঘটনাকে জ্যোতিষরা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে বলা শুরু করতো সৃষ্টিকর্তা বা কোন নির্দিষ্ট দেব-দেবী মানব জাতির প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,ঘনীয়ে আসছে বিভিন্ন দুর্যোগ। এসব শুনে মানুষ ভীষন ভয় পেতো। আর রাজ-রাজারা তাদের প্রভাব বলয় অনুকুলে রাখার জন্য জ্যোতিষ আর ধর্মজীবিদের পৃষ্টপোষকতাই করতেন না বরং তাঁদের রাজকীয় পদ দিয়ে সম্মানিত করতেন।



‘‘জ্যোতিষ শাস্ত্র কি বিজ্ঞান?” এ প্রশ্ন যেমন আগেও ছিল এই একবিংশ শতাব্দীতে আছে। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তত্ত্ব উপাত্তের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রহস্য উম্মোচন করে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়কে ভাগ করলে যে আটটি ধাপ পাওয়া যায় ।


সেগুলো হলোঃ
(১) পর্যবেক্ষন, (২) তুলনাকরন, (৩) শ্রেনীকরন, (৪) পরিমান নির্ধারন, (৫) পরিমাপন, (৬) পরীক্ষা-নিরীক্ষা, (৭) সিদ্ধান্ত গ্রহন ও (৮) ভবিষ্যদ্বানী করণ।

জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞানের এসব পর্যায় অবলম্বন করে গড়ে ওঠেনি বলে জ্যোতিষ শাস্ত্র বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয় ।

জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) হতে জ্যোতিষ শাস্ত্র মূলত উদ্ভব হয়েছে । আকাশের জ্যোতিষ্কসমূহের অবস্থান, তাদের গতিবিধি এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে জানার বিজ্ঞানকে জোতির্বিজ্ঞান বলা হয়। বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।


কোন গ্রহ-নক্ষত্র অপরটি হতে কত দূরে তা জানার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের যে শাখা আছে, তাকে বলা হয় ‘‘গানিতিক ও জোতিষ্ক জ্যোতির্বিজ্ঞান” (Mathematical and Spherical Astronomy)। গ্রহ-নক্ষত্র কিভাবে তৈরী হয়েছে তা জানার বিজ্ঞানকে বলা হয় জ্যোতিঃ পদার্থ বিদ্যা (Astrophysics)। মহাকাশে যাতায়াত করার বিদ্যাকে বলা হয় মহাকাশ যাত্রা বিদ্যা ।


মহাকাশযান বা এ সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত বিদ্যাকে বলা হয় এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। cosmology এতসব বিজ্ঞানের শাখার সাথে গণিত ও আধুনিক তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের নিবিড় সম্পর্ক আছে।

পূর্বেই বলেছি, মানুষের হাত দেখা, জন্মলগ্ন এবং হাব-ভাব দেখে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া ও এ সম্পর্কিত দিক নির্দেশনা দেওয়ার বিদ্যা জোতিষ শাস্ত্র ( Astrology) বিজ্ঞানের বিষয় নয় । যারা মানুষের হাত দেখেন তাদের বলা হয় গণক বা জোতিষী (Astrologer)।

 অপরদিকে গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্র নিয়ে হাতে-কলমে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করেন, তাদের বলা হয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ( Astronomer)। অনেক জ্যোতিষী বা ভাগ্যগননাবিদ বলে থাকেন তারা গ্রহ-নক্ষত্রের চর্চা করে ভাগ্য গননা করেন। এ কথার সম্পূর্ন ভিত্তিহীন। কারন রাশিফল ব্যাখ্যা করার সময়ই কতকগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধির কাল্পনিক হিসাব বলা হয়। এদের মধ্যে রবি (সূর্য) এবং সোম (চাঁদ)-কে গ্রহ ধরা হয়েছে। তাছাড়া রাহু ও কেতু নামের আরও দুটি গ্রহ কল্পনা করা হয়। আর ভাগ্যগননাবিদরা কল্পনা করেন, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্ররা ঘুরছে। সুতরাং ভাগ্য গননা বা জোতিষ শাস্ত্রের সাথে বিজ্ঞানের নূন্যতম সম্পর্ক থাকা দূরে থাক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কের প্রশ্নই আসে না।

বর্তমানে অনেক জোতিষী কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে ভাগ্য গননার কথা বলে থাকেন যা এক ধরনের প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এক শ্রেনীর মানুষের কাছে ভাগ্যগননা বিদ্যা চাঁদে যাওয়ার বিদ্যার চাইতে অনেক বেশী জনপ্রিয়। এসব মানুষের জীবনে হতাশা ও নিজেদের সাফল্যের ব্যাপারে আস্থাহীনতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব রয়েছে। এজন্য তারা ভাগ্য গননাবিদদের দারস্থ হয়।

অপরদিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সবচেয়ে জটিল ও কঠিনতম বিষয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান বরাবরই ব্যয় বহুল। চাঁদে অভিযানের প্রকল্প পরিচালনায় খরচ হয়েছিল দুইশত কোটি ডলারের বেশী অর্থ যা বাংলাদেশের তৎকালীন বাজেটের বিশ গুন।

জ্যোতির্বিজ্ঞান জ্যোতিষ শাস্ত্র অপেক্ষা কম জনপ্রিয় হওয়ায় আরোও একটি বড় কারন হলো গনমাধ্যম এবং ধর্মজীবিদের ভ্রান্ত ও যুক্তিহীন কর্মতৎপরতা। এ ধরনের একটা ঘটনার মাধ্যমে এদিকটা স্পষ্ট বোঝা যায়। ১৯৬৯সালের জুলাই মাসে মানুষ চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং এক সময় (২১শে জুলাই) তা সাফল্যজনকভাবে শেষ হয়, তখন বাংলাদেশের কিছু ধর্মজীবি বলেছিলেন,‘‘ওরা চাঁদে যায়নি। কোথা থেকে ঘুরে এসে কয়েকটা পাথর নিয়ে এসে বলছে চাঁদ থেকে ঘুরে এসেছি। ভেল্কিবাজি আর কাকে বলে। চাঁদে যাওয়া সম্ভব নয়।” ১৯৬৯সালে আমেরিকান দূতাবাসসমূহ বিভিন্ন দেশে চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা পাথর ও মাটি প্রদর্শন করা এবং চাঁদে অভিযানকারীদের কার্যক্রম দেখানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তারা একথাগুলো বলেন। বরাবরই গণমাধ্যম বির্তক ও দ্বিধা- দ্বন্দ জিইয়ে রাখতে পছন্দ করে বলে তাদের কথাগুলোই গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছিল । এসব ধর্মজীবিদের মতে ‘‘জোর্তিবিজ্ঞান ও জোতিষশাস্ত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ দুই বিদ্যা মানুষের মনে উম্মাদনা জাগিয়ে ধর্ম বিশ্বাসকে দূর্বল করে ফেলে। আর বেঁচে থাকার জন্য এ পৃথিবীই যথেষ্ট। পৃথিবীর বাহিরে কেন তৎপড়তা ? তাতে মানুষের কি কল্যান আছে ? ”


বিজ্ঞান চায় রহস্যের পূর্ন সমাধান। বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষনা সব সময়ই ব্যয়বহুল হলেও এক সময় তার ফলাফল জনগনের দোড় গোড়ার পৌছে যায়। এর সফলতা ভোগ করে জনগনই। অতীতকাল হতেই জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বানী ও তৎপরতা অনেক লোকই স্বাভাবিকভাবে নিতো না। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীসে এপিকুরিয়ান নামে একদল পন্ডিত জোতিষ্ক শাস্ত্র মানতেন না। তারা বলতেন আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের গতি প্রাকৃতিক নিয়মেই ঘটে। এতে দেব-দেবীদের খেয়াল-খুশির কোন সম্পর্ক নেই।

জ্যোতিষ শাস্ত্রের জোড়লো বিরোধীতা চোখে পড়ে ইহুদী ও ইসলাম ধর্মে। এ দুই ধর্মের সৃষ্টি জগতে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সকল বস্তু ও বিষয়ের সৃষ্টিকর্তার প্রতি দ্বিধাহীন আনুগত্যের কথা আছে ; আর আছে ভাল-মন্দ সব কিছু সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে হয়। আর এজন্য অনেক মুসলিম বিজ্ঞানীদের দেখা যায় জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।

আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে আলবেরুনী (৯৭০-১০৪৮ খৃ.) জোতিষ শাস্ত্রের বিরুদ্ধে বই লিখেন। তাঁর এ ধরনের একটি বইয়ের নাম ছিল ‘‘জোতিষীদের মিথ্যা ভবিষ্যদ্বানীর বিরুদ্ধে সতর্কবানী”। তাতে তিনি দেখান যে, জ্যোতিষীরা গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের ভিত্তিতে ভাগ্য নির্নয়ের দাবী করলেও তাদের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বানী অনেক ক্ষেত্রেই পরস্পর বিরোধী।

জ্যোতিষীরা ভাগ্য গননার জন্য তৈরী করেছেন রাশিচক্র। রাশিচক্র একটি চক্রাকার চিত্র, যাতে বিশেষ কোন দিনে তারা মন্ডলের পটভূমিতে দেখানো হয় বিভিন্ন গ্রহ, সূর্য ও চাঁদের অবস্থান। এই অবস্থান অনুসারে নেওয়া হয় ভাগ্য গননার সিদ্ধান্ত। পশ্চিমা বিশ্বে শুক্র (ভেনাস)-কে প্রেমের দেবী, তাই যদি শুক্র যদি রাশি চক্রে বিশেষ স্থানে থাকে, তাহলে জ্যোতিষীরা বলে থাকেন জাতকের উপর প্রেম ভর করেছে। অপর দিকে ভারতীয় পুরান শুক্র অসুরদের গুরু, তাই ভারতীয় মতে জ্যোতিষীরা বলে থাকেন জাতকের উপর প্রেমের বদলে হিংস্রতা ভর করেছে। কোন ব্যক্তি পশ্চিমা দেশের রাশিচক্র অনুসারে ভুগবে প্রেমে এবং ভারতীয় মতে হিংস্রতায় মেতে উঠবে; যা পরস্পর বিরোধী। জাতকের গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব আগে থেকেই প্রাচীন জ্যোতিষীরা স্থির করে গিয়েছেন। এখনও জ্যোতিষীরা অনুসরন করেন তাঁদের প্রাচীন নিয়ম। প্রাচীন জ্যোতিষীরা চার হাজার বছর আগে তারার পটভূমিতে সূর্যের পথ অনুসারে রাশিচক্রে স্থির করেছেন বারটি রাশি। তাদের মতে সূর্য হয় বারটি তারা মন্ডলের ভেতর দিয়ে ভ্রমন করে তাদের বলা হয় রাশি। তারা প্রত্যেক রাশিকে একেক বৈশিষ্ট্যপূর্ন বলে মনে করেন এবং এতে জাতকের উপর পড়ে বিশেষ প্রভাব। বাস্তবে সূর্য রাশিচক্রের তারাদের ভেতর দিয়ে ভ্রমন করে না এবং প্রাচীন জ্যোতিষীদের মত অনুযায়ী সূর্য চিরকাল একই রাশিতে উদিত হয় না।


 খ্রিষ্ঠপূর্ব ১৮৬৭ অব্দে ২১ মার্চে (বসন্ত বিষুব) সূর্য আকাশ গোলকের বিষুবরেখা পেরিয়ে উত্তর গোলার্ধের যে স্থানে প্রবেশ করে সেস্থানে ছিলেন মেষ রাশি। তাই ২১ মার্চ হতে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে যারা জন্মে তারা মেষ রাশির জাতক-জাতিকা। তখনকার দিনের জ্যোতিষরা মনে করতেন সূর্য চিরকাল এ সময় মেষ রাশিতে থাকবে। বর্তমানে সূর্য ২১ মার্চে মেষ রাশি নেই। কারন পৃথিবীর অভিমুখ বদল হয় বলে এ অবস্থা হয়েছে। প্রতি ২৬০০০ (ছাব্বিশ হাজার) বছর পর পর সূর্য পূর্বের রাশিতে আগমন করে। আর এ কারনে ধ্রবতারাও বদল হয়। খ্রি.পূ. ১২৫০০ অব্দে সূর্য ছিল কন্যা রাশিতে আর এখন তা আছে মীন রাশিতে। সুতরাং এখন রাশিচক্রের রাশির সাথে সূর্যের রাশির কোন মিল নেই। তাই এখনও ২১মার্চ-১৯এপ্রিলে যাদের জন্ম তারা মেষ রাশির। যদিও সূর্যের অবস্থান এখন অন্য কোন রাশিতে। সুতরাং আমাদের দেখা আকাশের সাথে জ্যোতিষ শাস্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই।

জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বানী অধিকাংশ সময় মিথ্যা প্রমানিত হয় বলে এখন তারা জাতক- জাতিকাদের ভাগ্য ও শুভ - অশুভ সম্পর্কে না বলে পূর্বাভাস ও হিতোপদেশ দেন। তার সবচেয়ে বড় প্রমান বাংলাদেশের বাংলা দৈনিক গুলোর প্রতিদিনের রাশিফল। জোতিষীদের ভবিষ্যদ্বানী জাতক-জাতিকাদের থেকে আরোও বড় এলাকায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে । বিংশ শতাব্দীতে ১৯৮২ এবং ১৯৯৮ সালে গ্রহগুলো একই রেখায় যুক্ত হওয়ায় জোতিষীরা বলেছিলো ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ পৃথিবী জুড়ে দেখা দিবে। এ ধরনের বিপর্যয়ই যেসব বছর ঘটেনি। কোন এক সময় প্রাচীন জ্যোতিষীরা দেখেছিল আকাশে লুব্ধক একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকলে বর্ষাকাল আসবে। কিন্তু পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তনের কারনে বর্ষা আসে । আগের দিনের মানুষেরা একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা ঘটতে দেখলে তাদের সম্পর্কিত করতো, খোঁজতো তাদের মধ্যকার সম্পর্ক । মনে করতো আগেরটির জন্যই এই ঘটনাটি ঘটেছে। জ্যোতিষ শাস্ত্র এভাবেই তৈরী হয়েছে।


আকাশ আজ আর মানুষের কাছে রহস্যময় বিষয় নয়। শক্তিশালী দূরবীক্ষন যন্ত্র এবং মহাকাশে অভিযান আকাশের রহস্য উম্মোচন করলেও জ্যোতিষীদের এ ব্যাপারে কোন দুশ্চিন্তা নেই। এতে জ্যোতিষ শাস্ত্রের জনপ্রিয়তাও কমছে না। এতে আমার মনে হয় মানুষকে দোষ দেওয়া যায় না। অজ্ঞনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারলেই জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রতি মানুষের আকর্ষন কমে যাবে। আর জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা সমাজের দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে হবে। তাহলেই আমরা আলোকিত ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ পাবে।

ডাকটিকেট সংগ্রহের ইতিকথা

ডাকটিকেট সংগ্রহের ইতিকথা


[আমি এই নিবন্ধটি ১৯৯০ সালে আমার স্কুলের ওয়াল ম্যাগাজিনের জন্য লিখেছিলাম । প্রথমে এটা দেওয়ালেই ছিল । ছেলেরা পড়তো আর বলতো আমরাও ডাকটিকেট সংগ্রহ করবো । পরবর্তীতে স্কুলের বার্ষিক স্মরণীকাতে নিবন্ধটি ছাপা হয় । তখন আমি স্কুল ছেড়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি । এখনো আমি ডাকটিকেট সংগ্রহকারী । আশা করি আমার এই নিবন্ধটি আপনাদের ভালো লাগবে । ]

 ডাকটিকেট সংগ্রহ বিশ্বে শখের রাজা হিসাবে স্বীকৃত এবং পৃথিবীতে যত শখ আছে তার মধ্যে সব চাইতে দামী শখ হচ্ছে- ডাকটিকেট সংগ্রহ। ডাকটিকেট সংগ্রহ শুধু সাধারণ মানুষের শখই নয় বরং বিশ্বের অনেক বড় বড় রাজা-রাণীর এ শখ ছিল এবং বর্তমানেও আছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ইংল্যাণ্ডের রাজা ৫ম জর্জ। ডাকটিকেট সংগ্রহ কেন মূল্যবান শখ তা একটি উদাহরণ থেকেই বোঝা যাবে। উদাহরণটি হল- ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিনস রাজ্যের ওয়েলস্ কোম্পানী মরিসাস (Mauritius)- এর একটি দুর্লভ এবং ছাপায় ভুল হয়ে যাওয়া ডাকটিকেট একটি খামসহ ২ লক্ষ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট হতে ক্রয় করেন। ঠিক এমনই একটি ডাকটিকেট রাজা পঞ্চম জর্জ ১৪৪০ পাউন্ড (ষ্টালিং)-এ ক্রয় করেন। সুতারং ডাকটিকেট সংগ্রহ হলো মূল্যবান শখ গুলোর অন্যতম।


 কখন থেকে ডাকটিকেট সংগ্রহ মানুষের শখ হয়ে দাঁড়ায় তার সঠিক তথ্য আজও অজানা। ১৮৪০ সালের ৬ই মে ইংলেল্যাণ্ডের এক ভূগোল শিক্ষক স্যার রিওল্যাণ্ড হিল (Sir Rowland Hill)-এর চেষ্টায় ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট এক পেনি মূল্যের আয়তাকার কালো রং-এর ডাকটিকেট প্রকাশ করে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে ডাকটিকেটের আকৃতি এবং রং বদলে গেছে।তখনকার ডাকটিকেট আজকের ডাকটিকেটের মতো ছিদ্রযুক্ত ছিল না ছিদ্রযুক্ত ডাকটিকেটের প্রবর্তন হয় ১৮৫৪ সালে।


ডাকটিকেটের প্রথম প্রকাশকারী দেশ হিসাবে ইংল্যাণ্ডের ডাকটিকেট আজও দেশের নাম (England) ছাপা হয় না। এ ব্যাপারটি ১৮৪০ সাল হতে চলে আসছে। তখন মানুষ ডাক মাশুল হিসাবেই ডাকটিকেট ক্রয় করতে না। ঘর সাজাবার জন্যও ক্রয় করত। এজন্য তাদেরকে ডাকটিকেট সংগ্রাহক বললেও ভুল হবে না। অনেকে ডাকটিকেট সংগ্রহকে হেয়ালী প্রকল্প এবং পাগলামী কাণ্ড বলে উপাধি দিলেও এটি একটি শিক্ষার মাধ্যমও বটে। অনেক ছোট খাট ডাকটিকেট এর সত্যতা প্রমাণ করে।


নিম্নের ডাকটিকেটগুলো বিষয়বস্তুর দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে এগুলোতে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আবার বিশ্বে ডাকটিকেট বিদ্যা (Philately ফিলাটেলি) নামে একটি আলাদা বিষয় রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে ডাকবিভাগে চাকুরী পাচ্ছে। একটি ডাকটিকেট হতে সর্বপ্রথম অজানা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাম (যথাঃ ভানুয়াত Vanuatu), উপনিবেশ (যথাঃ- ফ্রান্স গিয়ানা- GUYANA FRANCAISE), কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের পুরাতন নাম (যথাঃ- নামিবিয়ার পুরাতন নাম ছিল-উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা), কোন স্বাধীন দেশের সরকারী নাম লিবিয়া (সরকারী bvg-Socialist Peoplies Libyan Arab Jamahiriya) এবং কোন স্বাধীন দেশের বিশেষ অংশ ও রাজ্যের নাম (যথাঃ- আরব আমিরাত U.A.E এর একটি রাজ্য দুবাই) - এর নাম জানা যায়। তারপর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্হান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বীক কাহিনী জানা যায়। আবার অনেক দেশের বেশ কিছু ডাকটিকেট মুদ্রা হিসাবে (কয়েন স্ট্যাম ) ব্যবহার হয়। আবার অনেক দেশের ডাকটিকেট হতে সে সব দেশের জাতীয় সংগীত এবং জনপ্রিয় গানের সুর বাজানো যায়- অনেকটা বলা যায় একপ্রকার বাদ্য যন্ত্রের মতো। এসব ডাকটিকেটে টোকা দেওয়ার সাথে সাথে গানের সুর ধ্বনিত হয়। এ ধরণের ডাকটিকেট দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভূক্ত দেশ ভুটান (Bhutan) বের করেছে। উল্লেখ্য যে, ভুটান ডাকটিকেট রপ্তানীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে অনেক উন্নত।


জেনে রাখা উচিত ডাকটিকেট শুধু চারকোনাই হয় না। আবার ত্রিভুজ পঞ্চভুজ, ষড়ভুজ, অষ্টভুজ, ট্রাপিজিয়ামের মতো, তাসের হরতনের মতো, পানের পাতার মতো, এমনকি একটা দেশের ম্যাপের মতোও ডাকটিকেটের আকার হতে পারে। আবার ডাকটিকেট শুধু কাগজেই মুদ্রিত হয় না বরং খাঁটি সোনা-রূপা দিয়েও তৈরী হয়। এ পর্যন্ত বিচিত্র সব আকার এবং প্রকারের ডাকটিকেট সবচেয়ে বেশী বের করেছে ভুটান । বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডাকটিকেট তৈরীতে ভুটান বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। তার সাথে জানা উচিত বিশ্বের ছোট ও বড় ডাকটিকেট যথাক্রমে বলিভিয়া এবং সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৮৬৩ এবং ১৯৬২ সালে।


স্যার জন রিওল্যাণ্ড হিল যদিও ডাকাটিকেট বের করায় অবদান রাখেন, তার চাইতে বেশী অবদান হচ্ছে প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট অগাষ্টিন সিজারের। ডাক ব্যবস্থা প্রবর্তনে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। আবার ডাক ব্যবস্থার বিকাশ লাভ করে ওসমানীয় খলিফাগণের হাতে । ডাকটিকেট সংগ্রহ করে অনেক কিছু জানা যায়। তা আগেই বিস্তারিতভাবে লিখেছি। ওহ! এত্ত সব লিখতে লিখতে একটি কথা ভুলে গেছি, তা হলো- গ্রীস এক সময় এমনসব ডাকটিকেট বের করেছিল যাতে ইশপের গল্প মুদ্রিত ছিল। যারা গল্প শুনতে এবং পড়তে ভালবাসেন তাদের জন্য তা খুবই মজার। আবার যারা ফুল-ফল এবং পশু-পাখী পছন্দ করেন তারা ডাকটিকেট সংগ্রহ করে এসম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারেন এবং অবসর সময়কে স্বার্থকভাবে ব্যবহার করতে পারেন ।

০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৪১




সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ

সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ




আজ আমি প্রথম ব্লগ পোস্ট করছি । আমার পোস্টকৃত নিবন্ধটি আমার লেখা নয় । কিন্তু এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় নিবন্ধ । তাই সবার সাথে শেয়ার করছি । গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি । ধন্যবাদ সবাইকে। উৎস : দৈনিক ইনকিলাব ১৯৮৮ ইং আগস্ট রোজ বৃহস্পতিবার ১৪০৯ হিজরী লেখক : মাওলানা ড.আবদুল্লাহ আল-মারুফ মুহাম্মদ শাহ আলম উপপরিচালক,ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এম, এম, এম, এফ (ফাস্ট ক্লাস ফার্স্ট) লিসান্স. (ডিসইটস্ককশন) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদীনা মুনাওয়ারাহ 

 [সত্য প্রতিষ্ঠা ও সত্য অন্বেষার ক্ষেত্র সুবিস্তৃত। অনুসন্ধান, গবেষণা এবং যথার্থ বিশ্লেষণের আলোকে মূল সত্যে উপনীত হওয়ার কালজয়ী অনুপ্রেরণা ও মত বিনিময়ের শুভ সূচনার লক্ষ্যেই আমরা এই প্রবন্ধটি উপস্থাপিত করছি। গবেকগণ এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন, এটাই আমাদের কামনা । ( বিভাগীয় সম্পাদক : ইনকিলাব) 


 ইসলাম সমগ্র মানবতার একমাত্র দ্বীন। সেজন্য এর আচার-অনুষ্ঠানগুলোও বিশ্বজনীন। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে এই সব ইবাদত অনুষ্ঠাগুলো। রমজানের সিয়াম সাধনা এর অন্যতম। আল-হেলাল বা নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীতে রমজান এসে গেছে। বিশ্বময় এ মেহমানের আগমনে সাড়া পড়ে যায়। কারণএ নতুন চাঁদটি যে বিশ্বের সবার জন্য। আল্লাহ তায়ালার কালামে রয়েছে- “হে নবী ! আপনাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলে দিন, এটা সকল মানবমণ্ডলীর জন্য চিরস্থায়ী ক্যালেণ্ডার এবং হজ্বের সময় নির্ধারক।” ২/১৮৯ হাদীস শরীফে এ সম্পর্কে অনেকগুলো সমর্থক রেওয়াতে এসেছে যেমন- নতুন চাঁদ দেখে সওম আরম্ভ কর আর তা দেখেই ঈদ কর। যদি আকাশ আচ্ছন্ন থাকে তাহলে ৩০ দিন পুরা কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- সময়কে নিধারণ কর। (বুখারী ও মুসলিশ) হাদীসে যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতকে ব্যাপকভাবে সম্বোধন করেছেন নতুন চাঁদের উদয়ের স্থান কাল ও কোন দেশ বা জাতি নির্বিশেষে এ নির্দেশ আরোপিত হয়েছে। এজন্যই এ হাদীসটিকেই মাজহাবের ইমামগণ সারা দুনিয়ায় এক হুকুম-এর সুদৃঢ় ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রাঃ), ইমাম মালেক (রাঃ), ইমাম আহমদ (রাঃ) ও প্রখ্যাত আলেমগণ এ হাদীসের সম্বোধন ব্যাপক ও বিশ্বজনীন হওয়ার যুক্তিতেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পৃথিবীর এক প্রান্তে প্রথম চাঁদ দেখা যায় তাহলে অন্য প্রান্তে সে খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত হলে তাদের উপরও একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ করা ফরজ। কারণ নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে। (উপরোক্ত বক্তব্য প্রমাণের জন্য দেখুনঃ সিয়াম অধ্যায়- ফাতাওয়া, শামী, আলমগীরি, মারাকিউল ফালাহ, বাহ্রুর রায়েক, কাজীখান, ফাতহুল কাদীর, বাজাজিয়াহ, আল ইখতিয়ার, আল-ফিকহুল ইসলামী। মালেকী মাজহাবের আল-মনুতাকা, শরহে জুরকানী, আশ সরহুছ ছগীর, ফাতহুর রাহীম, হাম্বলী মাজহাবের- মুগনী, রওদুন নাদী, জাদুল মুসতাকান, আস-আলসাবীল ফি মারেফাতিদ দালীল, আল-কাফী আল-মুর্হারের ইত্যাদি কিতাব) কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে নতুন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরের যুক্তি নতুন চাঁদ দেখে রোজা রাখ, নতুন চাঁদ দেখে ভাঙ্গ। প্রশ্ন হচ্ছে , কারা দেখবে? বিশ্বের সকল রোজাদারকেই কি নতুন চাঁদ দেখতে হবে ? না, কিছু লোক দেখলেই চলবে। সে কিছু কতজন কমপক্ষে? আবার তারা, কি প্রত্যেক দেশের হতে হবে, না কি কোন এক দেশের কেউ হলেই চলবে। ইত্যাকার প্রশ্নদির জওয়াব উপরোক্ত হাদীসেই রয়েছে- সম্বোধন যেহেতু আ’ম (ব্যাপক) কাজেই যে কোন দেশের কেউ দেখলেই হবে। রমজান শুরুর বেলায় মেঘলা আকাশে চাঁদ দেখা গেছে বলে, একজন সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণীয় অবশ্য সমাপ্তির বেলায় কমপক্ষে দু’জন সাক্ষী লাগবে। আর আকাশ পরিস্কার থাকলে কয়েকজন সাক্ষীর দরকার হবে। তবে নির্দিষ্ট কোন দেশের লোক হওয়া শর্ত নয়। প্রথম দেখাই হল বড় কথা । আমরা হানাফী মাজহাবের হয়েও এতকাল যাবত শাফেয়ী মাজহাবের অনুকরণে স্থানীয় দেখার উপর ঈদ, রোজা করে আসছিলাম ওজরের কারণে। কিন্তু দ্রুত যোগাযোগ মাধ্যম আবিষ্কৃত ও সহজ লভ্য হবার কারণে বহু পূর্বেই সে ওজর দূর হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তবুও আমরা অবচেতনভাবে আগের মত করে যাচ্ছি। অনেক আলেম তো রেডিও - টিভিকে যাদুর বাক্স বলেই দায়িত্ব সেরে ফেলেছেন। অনেকের ধারণা, নতুন করে করতে গেলে ফেতনা বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, ফরজ সিয়াম ও ওয়াজিব ঈদ যদি সঠিকভাবে কারার পদক্ষেপকে ফেতনা বলেন, তাহলে ফেতনা জিনিসটা কি জানতে ইচ্ছে হয়। সরকারীভাবে উদ্যোগ নিলে তো আর এ ধরনের মতানৈক্যের প্রশ্ন উঠতো না। ঢাকায় ১৮৮৩ সালে ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ওআইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, অভিন্ন তারিখে গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসলামী ইবাদত অনুষ্ঠানগুলো করা হবে। তখন ইস্তাম্বুল ভিত্তিক হেলাল কমিটি এসে রিপোর্টও দেন যে, সারা বিশ্বের আলেমদের মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে যে, একই দিনে সারা বিশ্বে রোজা আরম্ভ ও ঈদ করাই শরীয়তের বিধান এবং তা আধুনিক বেতার যুগে পালন করা সম্ভব। কিন্তু কই অন্যান্য বিষয়ের মত ইসলামের এ রুকনটিও কাণ্ডজে সিদ্ধান্তই রয়ে গেল। সত্যি কথা বলতে কি এটা এখন আমাদের জাতীয় সমস্যা। হানাফী মাজহাবে যে সিদ্ধান্ত রয়েছে তা গ্রহণ করে বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বের সাথে প্রথম হেলাল-দর্শনকে ভিত্তি করে একই দিন রোজা শুরু করে একই দিন ঈদ পালন করলে একদিকে যেমন কিতাব অনুযায়ী আমল হবে অন্যদিকে এক উম্মাহ্ চেতনা আরো জোরদার হবে। বর্তমানে আমরা যেভাবে রোজা ও ঈদ পালন করছি এটা শাফেয়ী মাজহাবের মতে হচ্ছে। এমনকি শাফেয়ী মাজহাব যে ৪৮০ মাইলকে একটি হেলাল-দর্শনের আওতা বলে রায় দিয়েছেন । অভিন্ন পাকিস্তান আমলে লাহোর-পিণ্ডিতে চাঁদ দেখলে পূর্ব-পাকিস্তানেও ঈদ করা হতো। এখন কখনো কখনো তারা আমাদের ১ দিন আগে ঈদ করে যাচ্ছে। সন্দেহ নিরসনের জন্য বলতে হয় হানাফী মাজহাবসহ তিনটি মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো :নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে। দেশে দেশে সময়ের যে ব্যবধান তাতে ২৪ ঘন্টার (১ দিনের) পার্থক্য হয় না। স্থানীয় সময়কে অনুসরণ করলেই সর্বোচ্চ ১১ ঘন্টার ভিতর পুরো বিশ্বে মুসলিম বিশ্বে (ইন্দোনেশিয়া হতে মরক্কো পর্যন্ত) ঈদ করা যায়। তেমনি রোজাও রাখা যায়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়- ধরুন একই দিনে জুমা ও ঈদ হলো। এখন আমরা সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ পড়লাম ১টার সময় জুমা আদায় করলাম। সৌদি আরব আমাদের তিন ঘন্টা পর ঈদ ও জুমার নামাজ আদায় করল। যুক্তরাষ্ট্র করল বার ঘন্টা পর । আমরা টিভিতে দেখি আজ আরাফাতে হজ্ব হচ্ছে, কিতাব মতে কালই তো ঈদ হবে। কিন্তু আসলে আমরা করি ১/২ দিন পর। আমরা যে আলাদা হিসেবে ১০ তারিখে ঈদ করব সে আলাদা হিসেবের স্বীকৃতিই তো হানাফী মাজহাবে নেই। কোন ঠেকার কারণে শাফেয়ী মাজহাব পালন করতে যাচ্ছি আমরা? অনেকে নামাজের সাথে রোজাও তুলনা করেন। এটা ঠিক নয়। কারণ নামাজ ফরজ হয় এবং আদায় করা হয় সূর্যের উদয় অস্ত দিয়ে । রোজ শুরু কিন্তু হয় চন্দ্র দিয়ে, আদায় করা হয় সূর্যের উদয় অস্ত দিয়ে। সচেতন পাঠকগণ বুঝে নিবেন। সীমিত পরিসরে বিস্তারিত বলার অবকাশ নেই। পরিশেষে, বাংলাদেশ সরকার, মুহাক্কেক আলেমগণ ও সচেতন শিক্ষিত নাগরিকদের কাছে অনুরোধ- হানাফী মাজহাব অনুসারে যাদে আমরা রোজা শুরু করতে পারি এবং বিশ্বে সর্বপ্রথম চাঁদ দেখাকে অনুসরণ করে সঠিকভাবে ঈদ পালন করতে পারি সেজন্য এগিয়ে আসুন। বিবেক বিবাগী বলেছেন: এটা জটিল ব্যাপার। এখন জাপান আর আমেরিকার মাঝে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা না হয়ে প্রতি মাসে নতুন চাঁদ ওঠার স্হানকে প্রথম ধরে যদি পৃথিবীতে নতুন মাস আসার ঘোষণা কেন্দ্রীয়ভাবে মুসলিমরা করতো, সেটাই বেস্ট হত। ইসলামে তো এত এত দেশ হবার কথাই ছিল না। একই খিলাফতে আন্ডারে থাকা উচিৎ ছিল। এক্ষেত্রে রাত থাকতেই থাকতেই যদি চাঁদ ওঠার খবর পাওয়া যায়, তবে ঐ চাঁদকেই ফলো করা উচিত, সেটা যেখানেই হোক না কেন। আমাদের চাঁদ দেখা কমিটি তো আর চাঁদ দেখে না, চাঁদ দেখতে পাওয়া গেছে, এই খবর সংগ্রহ করে। এখন কে বুঝাবে আলেমদের। বড় কঠিন কাজ। সরকার ও জনগণের দুষ্টচক্রে এই ব্যাপারটা আমাদের দেশে ইনকর্পোরেট করা খুবই কঠিন। মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন: আপনার সাথে একমত । আমাদের সবাইকে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে এবং আমাদেরকেই ও.আই.সি-র ”অভিন্ন তারিখে গোটা মুসলিম বিশ্বে ইসলামী উৎসবগুলো করা”-র প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে জনমত সৃষ্টি করতে হবে । আপনাকে ধন্যবাদ http://m.somewhereinblog.net/blog/fakhrul78/29425790