Friday, September 27, 2019

Sunday, September 22, 2019

বখতিয়ার খিলজির স্বর্ণমুদ্রা

বখতিয়ার খিলজির স্বর্ণমুদ্রা



১২০৪ খ্রিঃ ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলা বিজয় করেন এবং তিনি স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন । তাঁর মুদ্রায় তিনি ভারতের প্রথম মুসলিম রাজবংশ প্রতিষ্ঠাকারী মুহাম্মদ ঘোরি বা মুহাম্মদ বিন সাম এর নাম ব্যবহার করেন ।

বখতিয়ার খিলজির স্বর্ণমুদ্রা :

আসলে বঙ্গ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতেই স্মারক মুদ্রা হিসেবে এই মুদ্রা চালু হয়েছিল । মুদ্রাটির বিবরণ নিচে দেওয়া হলো ।

ধাতুঃ সোনা

সামনের পিঠঃ বৃত্তের মধ্যে গদা হাতে অগ্রসরমান অশ্বারোহী ।

উৎকীর্ণ লিপিঃ আরবী- ফি মুন্তাসফ রমাজান সানহ আহদি ওয়া সাতমায়াহ

নাগরী- গৌড় বিজয় ।

পেছনের পিঠঃ আরবি লিপি- আল সুলতান আল মুয়াজ্জাম মুইজুদ্দুনিয়া ওয়াদ্দিন আল মুজাফফর মুহাম্মদ বিন সাম ।

বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য এই মুদ্রার একটি আছে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এবং অন্যটি আছে ওয়াশিংটেনের মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউটে ।

 

পরবর্তীতে বখতিয়ার খিলজির শাহাদাতের পর ১৩৩৮ খ্রিঃ পর্যন্ত ২২ জন মুসলিম শাসক দিল্লির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন । তাদের মধ্যে ৬ জন শাসক মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন । তাঁদের নাম নিচে দেওয়া হলো । উল্লেখ্য যে, এদের মুদ্রাগুলো প্রধানত রূপার তৈরী ।

নাম ও রাজত্বকাল:

১. গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খিলজি (১২১১ খ্রিঃ – ১২২৭ খ্রিঃ)

২. মুঘিস উদ্দিন ইউজবক (১২৪৬ খ্রিঃ – আনুমানিক ১২৫১ খ্রিঃ)

তাঁদের মুদ্রার বৈশিষ্ট্যঃ

সামনের পিঠে কলেমা উৎকীর্ণ ছিল তারিখও উল্লেখ করা ছিল  পিছনের পিঠে শাসকের নাম ও পদবী উল্লেখ করা ছিল । মুদ্রাগুলো ছিল রূপার তৈরি ।

৩. রুকনুদ্দিন কায়কাউস ( ১২৯১ খ্রিঃ- ১৩০২খ্রিঃ)

৪. সামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ ( ১৩০২ খ্রিঃ- ১৩১৮খ্রিঃ)

 

৫. শিহাব উদ্দিন বুঘরা শাহ (১৩১৮ খ্রিঃ)

৬. গিয়াস উদ্দিন বাহাদুর শাহ ( আনুমানিক ১৩১০ খ্রিঃ – আনুমানিক ১৩২২ খ্রিঃ)

তাঁদের মুদ্রার বৈশিষ্ট্যঃ

কলেমার স্হানে বাগদাদের শেষ আব্বাসিয় খলিফা আল মুস্তাসিম এর নাম উৎকীর্ণ থাকতো মুদ্রাগুলো ছিল রূপার তৈরী তবে সামসুদ্দিন ফিরোজ শাহের কিছু সোনার মুদ্রা ছিল

 

তথ্যের সূত্রঃ মুদ্রা ইতিহাস ও সংগ্রহ – মাহমুদুল হাসান,  জাগৃতি প্রকাশনী ঢাকা,প্রথম প্রকাশ ২০০২,পৃষ্ঠা ১৩৯ ।

 

 

Wednesday, September 18, 2019

বুক রিভিউ লেখার নিয়ম

বুক রিভিউ লেখার নিয়ম



অনেকেই জানতে চান কীভাবে বুক রিভিউ লিখতে হয়। সত্যি কথা বলতে, বুক রিভিউ লেখার ধরাবাঁধা কোন নিয়ম নেই। আপনার মনমতো যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে লিখতে পারেন। এর গঠনগত কোনো মডেল নেই, শুরু করার নির্দিষ্ট ব্যাকরণ নেই, শেষ করার কোন বিশেষ বিধি নেই।

বুক রিভিউ কাকে বলে?

উত্তর হতে পারে এমন : এটা জাস্ট আপনার একটা প্রতিক্রিয়া। একটা বই পড়ে আপনার কেমন লেগেছে সেই অনুভূতি। কেন এই বইটা অন্যদের পড়া উচিত সেই সম্পর্কে আপনার মতামত। যদি মনে করেন, বইটি আপনার খুব খারাপ লেগেছে বা পড়ে সময় নষ্ট হয়েছে—সেটা বলাও বুক রিভিউ। এটি অনেকটা পণ্যের গুণমানের মতো, যাতে আপনার রিভিউ পড়ে অন্যরা আগ্রহী অথবা সতর্ক হয়।

রিভিউয়ে কী থাকবে?

আগের আলোচনা নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে একটা বইয়ের রিভিউয়ে কী কী থাকতে পারে। যেহেতু আপনি বইটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে চাচ্ছেন তাহলে বইটির পরিচিতি থাকবেঅর্থাৎ এটি কী ধরনের বই– কবিতা নাকি উপন্যাস, প্রবন্ধ নাকি ফিকশন, ধর্ম নাকি বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক নাকি রাজনৈতিক? বইটির লেখক কে? লেখকের বিশেষ কোন পরিচয় থাকলে উল্লেখ করা যেতে পারে। বইটির প্রকাশনী কোনটা, কত সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছে–এ ধরনের তথ্যও দিলে পাঠকের জন্য সুবিধা হবে।

দ্বিতীয়ত, বইটি কোন ধরনের পাঠকের জন্য উপযোগী? অর্থাৎ বইটি বুঝতে নির্দিষ্ট বয়স বা যোগ্যতা প্রয়োজন আছে কিনা। বইটি পড়লে তাদের কী লাভ হতে পারে? কোন ক্ষেত্রে এই বইয়ের জ্ঞান কাজে লাগতে পারে? সব বই যে জ্ঞানের হবে তা না। তাহলে বিনোদন হবে কিনা, আনন্দ পাবে কিনা, সুন্দর সময় কাটবে কিনা!

তৃতীয়ত, বইয়ের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, যাতে পাঠক একটু ধারণা লাভ করে। সারসংক্ষেপ জানলে পাঠক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বইটি পড়বে কিনা। তবে যদি উপন্যাস হয়, থ্রিলিং কোনো টুইস্ট থাকে– সেসব উল্লেখ করা উচিত নয়। কারণ রহস্য জেনে গেলে বইটি পড়ে আর মজা পাবে না।

চতুর্থত, লেখকের দক্ষতা প্রসঙ্গ। অর্থাৎ যে বিষয়টি নিয়ে তিনি লিখেছেন তা কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। লেখক কতটা মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, কতটা গভীরে যেতে পেরেছেন, কতটা নতুন কথা বলতে পেরেছেন, কতটা নতুন কিছু শেখাতে পেরেছেন। বইটি কি তার মৌলিক সৃষ্টি মনে হয়েছে নাকি কপিপেস্ট মার্কা চর্বিতচর্বণ হয়েছে—সেটাও বলতে পারেন।

পঞ্চমত, বইয়ের প্রশংসনীয় দিকগুলো বলতে পারেন। কী কারণে লেখক বাহবা পেতে পারেন, কোন কোন বিষয়ের কারণে আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন সেসব লিখতে পারেন। লেখক পাঠককে কতটা আলোড়িত করতে পেরেছেন, কতটা ভাবনার উদ্রেক ঘটাতে পেরেছেন, কতটা আবেগাপ্লুত করতে পেরেছেন?

ষষ্ঠত, বইটি পড়ে আপনার কতটা ভালো লেগেছে, কতটা খারাপ লেগেছে, আপনার উপর কেমন প্রভাব ফেলেছে— সেসব কথা বলতে পারেন। আপনার খুব পছন্দ হয়েছে এমন কোনো উক্তি, ডায়লগ, বা চরিত্র থাকলে সেটাও উল্লেখ করতে পারেন।

সপ্তমত, বইটির অসঙ্গতি তুলে ধরতে পারেন। কোনো তথ্যগত ভুল, প্রসঙ্গগত অমিল, উপস্থাপনের ত্রুটি থাকলে পাঠককে জানিয়ে দিতে পারেন। আপনার কাছে কোনো কিছু উদ্ভট-আজগুবি মনে হলে, পাগলের প্রলাপ মনে হলে, লেখকের উদ্দেশ্যগত অসততা দেখলে সেটার প্রমাণও তুলে ধরতে পারেন।

ভালো রিভিউ কোনটা?

আগেই বলেছি রিভিউয়ের কোনো নির্দিষ্ট মডেল নেই। তাহলে ভালো রিভিউ কোনটা? উত্তর হচ্ছে, আপনার রিভিউয়ে আপনি কতগুলো বিষয় আনতে পেরেছেন। উপরে আমি যে বিষয়গুলো বললাম, এগুলোর বাইরেও কিছু থাকতে পারে। তথ্যগুলোর কোন সিরিয়াল বা ধারাবাহিকতা নেই। আপনি যখন যেভাবে তথ্যের উপস্থাপন উপযোগী মনে করেন সেভাবেই করতে পারেন। এবার দেখা যাবে বই বা লেখকের আলোচনা-সমালোচনা বিষয়ে আপনার দক্ষতার প্রশ্ন। আপনি কতটা গঠনমূলকভাবে এই মতামত ব্যক্ত করতে পেরেছেন, কতটা সুন্দরভাবে আপনার রিভিউটা উপস্থাপন করতে পেরেছেন! আপনার রিভিউ পড়ে পাঠকও রিভিউ করবে তারা কতটা ভালোভাবে জানতে পেরেছে‍!

রিভিউ লিখতে করণীয় কী?

বইটি পড়ার সময় মনোযোগ দিতে হবে। আগে থেকে করা ভালো বা খারাপ ধারণা বাদ দিয়ে খোলা মনে বইকে উপলব্ধির চেষ্টা করতে হবে। পড়তে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় নোট করতে হবে অথবা চিহ্নিত করে রাখতে হবে। বইটি লেখক যেভাবে বুঝাতে চেয়েছেন তার ইন্টেশনটা আপনাকে ধরতে পারতে হবে। না বুঝে বা কম বুঝে আন্দাজে তার সমালোচনা করা হবে লেখকের প্রতি অবিচার। সর্বশেষ মনে রাখুন, আপনাকে নির্মোহ হতে হবে। পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না। আপনাকে সৎ থাকতে হবে। অযথা প্রশংসা করবেন না, আবার আন্দাজে নিন্দেও করবেন না।

লেখা—তানিম ইশতিয়াক

 

বাড়ির চার পাশে যেসব গাছ লাগানো উত্তম

বাড়ির চার পাশে যেসব গাছ লাগানো উত্তম



গাছ লাগানোর আগে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা জরুরী। পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং উর্বর জায়গা নির্বাচন করা উত্তম। লক্ষ্য রাখতে হবে বেলে মাটিতে গাছ ভাল জন্মে না। তাই বেলে মাটিতে গাছ লাগাতে চাইলে বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন।



বাড়ির উত্তর পাশেঃ
বাড়ির উত্তরে বড় গাছপালা থাকলে ঝড়ো বাতাস থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। তাই বড় এবং শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ উত্তরে লাগানো উচিৎ। যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম, মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমনি, বাঁশ, তেঁতুল, পিতরাজ ইত্যাদি।


বসতবাড়ির দক্ষিণেঃ
দক্ষিণ পাশে বড় আকারের গাছ লাগালে বাড়িতে সূর্যের আলো বাতাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বাড়ি হয় অন্ধকারোচ্ছন্ন স্যাঁতসেতে। তাই বাড়ির দক্ষিণে ছোট আকারের কম ঝোপ ঝাড় বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। যেমন- সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদী প্রভৃতি।


 
বাড়ির পূর্ব-পশ্চিম পাশেঃ- 
মাঝারি আকারের মধ্যম ঝোপালো গাছ লাগানো ভাল। এতে বাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়ে এবং আলো বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। পূর্ব-পশ্চিমে লাগানোর উপযুক্ত গাছ হল কুল, সফেদা, আম, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, শরিফা, গাব, কামরাঙ্গা, পেয়ারা ইত্যাদি।


রাস্তার পাশেঃ
রাস্তা দুই পাশে উঁচু শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। রাস্তার ধারে যেসব গাছ লাগানো হয় সাধারণত মাঝে মাঝে ডালপালা ছাটাই করা হয়। তাই ছাটাই সহ্য করতে পারে এমন গাছই নির্বাচন করতে হবে। যেমন-মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, তাল, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিল ইপিল, শিমুল, মান্দার, রেইনট্রি, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিরীষ, অর্জুন, সোনালু ইত্যাদি।  

গ্রামের কাঁচা রাস্তা দু পাশে লাগানো যেতে পারে শিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিল ইপিল, খেজুর, তাল প্রভৃতি গাছ।
পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন

পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন



ইউক্যালিপটাস। কারণ অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী, নিম্নমানের কাঠ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

রেইন-ট্রি। কারণ এই আগ্রাসী গাছ অন্য গাছকে বাড়তে দেয় না, ঝরা পাতা ফসল ও মাছের জন্য ক্ষতিকর, কাঠও নিম্নমানের।

মেহগনি। এর ফল বিষাক্ত। পুকুরের পানিতে পড়লে মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অত্যধিক রোপিত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই।

 শিশু। কারণ এর কাঠ মাঝারি মানের, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।

একাশিয়া। কারণ এর মাইক্রোস্কোপিক রেণু অ্যালার্জি/অ্যাজমার অনুঘটক, কাঠ মাঝারি মানের, গঠন আঁকাবাঁকা, বাংলাদেশে অতিরিক্ত রোপিত।

Sunday, September 15, 2019

বাংলাদেশের গৃহস্থালিভিত্তিক গাছগাছড়া বা বনরাজি

বাংলাদেশের গৃহস্থালিভিত্তিক গাছগাছড়া বা বনরাজি



বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের গৃহস্থালিভিত্তিক গাছগাছড়া বা বনরাজির একটি জরিপ সম্পাদন করেছে। জরিপটি সম্পাদিত হয়েছিল ২০১১-১২ সালে। এ জরিপ দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৬৩০০ গৃহস্থালির ওপর সম্পাদিত হয়েছে। জরিপের চয়ন অনুযায়ী এ সব গৃহস্থালি দেশের ১৮৪টি মৌজায় এবং ২টি মহল্লায় দেশের ৭টি বিভাগে ছড়ানো ছিল। জরিপের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করলে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, জরিপপ্রাপ্ত উপাত্তসমূহ (পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া) সারাদেশের এ বিষয়াধীন অবস্থার প্রতিফলক এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে ধরে নেয়া যায় এ জরিপে প্রাপ্ত উপাত্তসমূহ ২০১৫ সালের প্রথম দিকেও মোটা দাগে প্রযোজ্য।

এ জরিপে দেখা গেছে যে, দেশে গৃহস্থালি পর্যায়ে গাছগাছড়া বাবদ মূল্য সংযোজনের পরিমাণ (সমকালীন মূল্যে) ১২৩৮৯ কোটি টাকা। ২০১০-১১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১০৮৮১ কোটি টাকা বা শতকরা প্রায় ১৪ ভাগ কম। ২০১০-১১-এর তুলনায় ২০১১-১২ সালে মূল্য সংযোজনের প্রকৃত বৃদ্ধির পরিমাণ এর চাইতে কম হবে বলে মনে হয়। টাকার নামিত মূল্যে ২০১১-১২ সালে প্রতিফলিত এ বৃদ্ধি সম্ভবত প্রকৃত বৃদ্ধির পরিমাপক নয়।

জরিপে দেখা গেছে, দেশের সকল গৃহস্থালিতে ২০১১-১২ সালে ৪০ কোটি ৩০ লাখ ফলদ গাছ, প্রায় ৪০ কোটি কাঠ গাছ, প্রায় ৫২ কোটি বাঁশ এবং প্রায় ১৩ কোটি অন্যান্য গাছগাছড়া ছিল। ২০১০-১১ সালের তুলনায় এক বছরে এই বৃদ্ধি ফলদ গাছের ক্ষেত্রে হয়েছে প্রায় শতকরা ৬ ভাগ, কাঠ-গাছের ক্ষেত্রে শতকরা ৪ ভাগ, বাঁশের ক্ষেত্রে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ ও অন্যান্য গাছের ক্ষেত্রে প্রায় শতকরা ৫২ ভাগ। এতে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে গাছের সংখ্যা এক বছরে তাৎপর্যমূলকভাবে বেড়েছে এবং জনগণ অধিকতর সংখ্যায় গাছ রোপণ ও অধিকতর মাত্রায় গাছের যতœ করছেন।

জরিপে দেখা গেছে যে, ২০১১-১২ সালে প্রতি গৃহস্থালিতে গড়ে ৪৩টি বড় গাছ বিদ্যমান ছিল। ২০১০-১১ সালে প্রতি গৃহস্থালিতে এ গাছের গড় সংখ্যা ছিল ৪১।

পরিকল্পিতভাবে গৃহস্থালিতে সৃষ্ট বনের মধ্যে ২০১১-১২ সালে গাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ। ২০১০-১১ সালে ওই সংখ্যা ছিল ৫১ কোটি ৮০ লাখ অর্থাৎ গৃহস্থালিতে পরিকল্পিতভাবে সৃৃজিত গাছগাছালির সংখ্যা বেড়েছে এক বছরে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ। এ তথ্য প্রমাণ করে যে দেশের বিদ্যমান পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে পরিকল্পিতভাবে গৃহস্থালি পর্যায়ে অধিকতর গাছগাছালি রোপণ ও লালন করা সম্ভব।

২০১১-১২ সালে গড়ে প্রতি গৃহস্থালিতে ৩.৭ শতাংশ ভূমি বা জমির ওপর পরিকল্পিতভাবে গাছগাছড়া রোপিত ও বিদ্যমান ছিল। ২০১০-১১ সালে সকল গৃহস্থালির জন্য এই গড় ছিল ৩.৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে জনগণ প্রান্তিকভাবে অধিকতর জমি পরিকল্পিত বনায়নে প্রযুক্ত করেছেন।

২০১১-১২ সালে সারাদেশে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ঘনফুট কাঠ গৃহস্থালিতে ব্যবহারের জন্য উৎপন্ন হয়েছে। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ অর্থাৎ এক বছরে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত কাঠের পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৯ ভাগেরও বেশি। ২০১১-১২ সালে গৃহস্থালি পর্যায়ে উৎপাদিত জ্বালানি কাঠের পরিমাণ হয়েছিল ৫১৯১৮৩৫ টন, যার মূল্য প্রাক্কলিত হয়েছে ৪৬৫১ কোটি টাকা। 

২০১০-১১ সালে গৃহস্থালি পর্যায়ে জ্বালানি কাঠের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪২৯০৬৫৪ টন অর্থাৎ শতকরা প্রায় ১৭ ভাগ কম। মূল্যের নিরিখে এ কমতির পরিমাণ ছিল শতকরা প্রায় ১৯ ভাগ কম। ২০১১-১২ সালে গৃহস্থালি প্রতি গড় উৎপাদিত জ্বালানি কাঠের পরিমাণ ছিল ১০৩৯ কেজি, যা ২০১০-১১ সালে ছিল ১০৬৮ কেজি। এর অর্থ প্রান্তিকভাবে জ্বালানি কাঠের উৎপাদন বাড়লেও গৃহস্থালি পর্যায়ে গড়ে গৃহস্থালির জন্য জ্বালানি কাঠের ব্যবহার কমে আসছে। টাকার মূল্যে গৃহস্থালি পর্যায়ে জ্বালানি কাঠের দাম প্রাক্কলিত হয়েছে ১০১৫৮ কেটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৭৬৪ কোটি টাকা।

২০১১-১২ সালে বিক্রির জন্য গৃহস্থালি পর্যায়ে উৎপাদিত কাঠের পরিমাণ হয়েছিল প্রায় ১৩.১৬ কোটি ঘনফুট। ২০১০-১১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩.২৪ কোটি ঘনফুট। এর অর্থ গৃহস্থালিতে উৎপাদিত গাছগাছড়ার ক্রমাগত বেশি অংশ গৃহস্থালিতেই ব্যবহৃত হচ্ছে, বাজারে যাচ্ছে না। ২০১১-১২ সালে অবশ্য গৃহস্থালিতে উৎপাদিত সকল গাছগাছড়ার মূল্য প্রাক্কলিত হয়েছে ৫০২৪৯ কোটি টাকা বা ২০১০-১১ সালের উৎপাদনের তুলনায় শতকরা ৩.২ ভাগেরও কম।

মূল্যস্ফীতি হিসেবে নিলে এই কমতির পরিমাণ আরও বেশি হয়। সার্বিকভাবে গৃহস্থালিতে ২০১১-১২ সালে উৎপাদিত কাঠের পরিমাণ ছিল ১৬.৭৪ কোটি ঘনফুট। এর মূল্য প্রাক্কলিত হয়েছে ৬০৪০৭ কোটি টাকা। এই উৎপাদন ও তার মূল্য ২০১০-১১ সালের তুলনায় প্রান্তিকভাবে বেশি।

২০১১-১২ সালে গৃহস্থালিতে উৎপাদিত রাবার লেটেক্সের পরিমাণ ছিল ১৫৫২ মেট্রিক টন। ২০১০-১১ সালে এর পরিমাণ ছিল ১০৩০৭ মেট্রিক টন। রাবার উৎপাদন সম্পর্কে এই পর্যায়ে প্রাপ্ত সংখ্যা দেশের মোট রাবার উৎপাদনের প্রতিফলক নয়। কেননা, দেশের রাবার উৎপাদনের প্রায় সর্বাংশই গৃহস্থালির বাইরে সংজ্ঞায়িত বন এলাকায় হয়ে থাকে।


এই জরিপে এটাও বিদিত হয়েছে যে ৫ শতাংশ বা তার বেশি জমি সংবলিত গৃহস্থালির মধ্যে শতকরা ৮.১ ভাগে কোন গাছগাছালি নেই এবং মাত্র শতকরা ৩.১ ভাগ গৃহস্থালিতে পরিকল্পিতভাবে গাছগাছড়া রোপণ ও লালন করা হচ্ছে; শতকরা ২১.৬ ভাগ গৃহস্থালিতে বাড়ির বাইরে অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা বনরাজি রয়েছে। এই তিনটি তথ্য গৃহস্থালি পর্যায়ে অধিকতর ও বিস্তৃততর গাছগাছালি রোপণ ও লালনের বড় পরিধির বিদ্যমানতা নির্দেশ করে।


এ জরিপে প্রাপ্ত তথ্যাদির আলোকে এ সুস্পষ্ট হয়েছে যে বাংলাদেশে গৃহস্থালি পর্যায়ে শহরে এবং গ্রামে গাছগাছালির সংখ্যা বেশ কম। যে শ্যামল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে যুগ যুগ ধরে ধরা আছে তা ক্রমান্বয়ে দ্রুতগতিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

জরিপে এটাও সুস্পষ্ট হয়েছে যে, গৃহস্থালি পর্যায়ে শহরে ও গ্রামে জ্বালানি কাঠের অভাব প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়ে আসছে। যদি এর সঙ্গে ফসল উৎসারিত খড়-কুটার জ্বালানি হিসেবে সরবরাহ কমে আসে তাহলে সার্বিকভাবে গৃহস্থালি পর্যায়ে জ্বালানির এ অভাব প্রকটতর হবে।

এ জরিপে প্রাপ্ত এ সব তথ্যাদির ভিত্তিতে বাংলাদেশে গৃহস্থালি পর্যায়ে বনায়ন বিস্তৃতকরণের বা গাছগাছালির সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে কতিপয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক. গৃহস্থালি পর্যায়ে বনায়নকে ব্যাস্টিক ও সামষ্টিক কর্মসূচী ও দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। গৃহস্থালিতে লভ্য জমির পাশাপাশি গ্রাম, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের বিস্তৃত সড়কগুলোর দু’ধারে পরিকল্পিতভাবে বনায়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

 আমরা চাঁদপুরের কচুয়া থানায় সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী নামক এক অসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ বছরে কয়েক কোটি টাকা কাঠ-গাছ রোপণ-পরিচর্যা করার পরে পরিপক্বতার চক্র অনুযায়ী সেগুলো বিক্রি করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করতে সমর্থ হয়েছি। এ কার্যক্রমের আওতায় সড়কের পাশের গ্রামে বসবাসরত স্বল্পবিত্ত বা বিত্তহীন পুরুষ ও নারীরা একেকজনে সড়কের দু’পাশে অসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রোপিত নির্দিষ্ট সংখ্যক গাছের পরিচর্যা প্রায় ১০ বছর ধরে করেছেন এবং পরে সেসব গাছ বিক্রি করে যে আয় পাওয়া গেছে তার শতকরা ৬০ ভাগ নিজেরা নিয়েছেন, ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট অসরকারী প্রতিষ্ঠানকে গাছ কেটে নেয়া স্থানে আবার নতুন করে গাছ লাগাতে দিয়েছেন এবং বাকি ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দিতে পেরেছেন। 

প্রতি বর্গমাইলের সড়ক নিবিড়তা বাংলাদেশে পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে বেশি। এ সব সড়কের দু’পাশে বন সৃষ্ট করলে তা কেবল সড়ক রক্ষণে নয়, যথা প্রয়োজন বনরাজি সৃষ্টি করে দেশের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বাড়ানোয় এবং অধিকতর বৃষ্টিপাত ঘটানোয় সহায়ক হবে। এ ধরনের কার্যক্রম দেশের সর্বত্র গ্রহণ করলে সামাজিক বনায়নের সঙ্গে গৃহস্থালির বনায়নও বিস্তৃত হবে।


দুই. গৃহস্থালি বনায়ন সকল পর্যায়ে বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে নার্সারি বা বীজাগার প্রতিষ্ঠা করা কর্মানুগ হবে।

নার্সারি স্থাপনকে অধিকতর বিস্তৃত ও ত্বরান্বিত করে গৃহস্থালি ও সামাজিক বনায়নের জন্য প্রয়োজনীয় গাছের চারা সহজতর ও সুলভতরভাবে লভ্য হবে।

তিন. দেশে জ্বালানি কাঠ এবং গৃহস্থালি নির্মাণ ও আসবাবপত্র নির্মাণে কাঠের ব্যবহার যৌক্তিকভাবে কমাতে হবে। এ লক্ষ্যে জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহারকে কমানোর জন্য ধানের তুষ ও খড়-কুটা মিশিয়ে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে অধিকতর শক্তিশালী জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার, সকল ইটের ভাটায় কাঠের পরিবর্তে দেশ থেকে আহরিত কয়লা প্রযুক্তকরণ, গৃহস্থালিতে বিশেষত শহরের গৃহস্থালিতে অনুরূপভাবে কয়লার ব্যবহার প্রচলিত ও বাড়ানো লক্ষ্যানুগ হবে। তেমনি বিজ্ঞান ও শিল্প সংস্থার গবেষণালব্ধ জ্বালানি সাশ্রয়ী চুলা ব্যবহার, বায়ো গ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে।

চার. আইন করে দেশে ফলদ গাছ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ছাড়া কাটা নিষিদ্ধ করতে হবে। অনুরূপভাবে বনজ ও ভেষজ গাছ পরিপক্ব না হওয়ার আগে কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হবে। শহরাঞ্চলে ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছের রোপণ ও পরিচর্যা বিস্তৃত এবং মালিকানা ও অবস্থান নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি ছাড়া এ সব গাছ কাটা নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনের মানদণ্ডে বাংলাদেশের বন-আবৃত ভূমির পরিমাণ অনেক কম। এ কমতির পরিমাণ কিয়দংশে বাড়ানো যেত যদি গৃহস্থালি পর্যায়ে বন-সম্পদ বা গাছগাছালি বেশি থাকত। পশ্চিমা ইউরোপের কতিপয় দেশে মালিকানা ও স্থান নির্বিশেষে গাছ কাটার ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ঈপ্সিত ফল দিয়েছে।

পাঁচ. শহর ও গ্রামের গৃহস্থালি পর্যায়ে এবং অন্য কাজে প্রযুক্ত না হওয়া খালি জমিতে অধিকসংখ্যক গাছ রোপণ ও লালন করার অনুকূলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে এ ধরনের সামাজিক চেতনাবোধ প্রায় সে সব দেশের প্রায় সকল দেশের নাগরিকদের গাছ রোপণ ও লালন করার অনুকূলে প্রণোদিত করেছিল। ফলদ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপ লক্ষণীয় কম সময়ে একটি সবুজ আবাসন সংবলিত মহাদেশে রূপান্তরিত হয়। জমির স্বল্পতা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে এ ধরনের চেতনাবোধ হতে আমরা ঈপ্সিত মাত্রায় ও দ্রুততার সঙ্গে আবারও শ্যামল দেশে রূপান্তর ও রক্ষা করতে সক্ষম হব।
বৃক্ষ রোপণ করি সবুজ বাংলাদেশের জন্য

বৃক্ষ রোপণ করি সবুজ বাংলাদেশের জন্য



গাছ লাগান দেশ বাঁচান’। যানবাহনের গায়ে ও বন বিভাগের অফিসের দেয়ালে লেখা এ স্লোগানটি প্রায়শ চোখে পড়লেও দেশের সরকারি বনাঞ্চল দিন দিন ন্যাড়া হচ্ছে। তথাপি দেশের মানুষ আগের চেয়ে বৃক্ষ রোপণের ব্যাপারে উৎসাহিত হচ্ছে, যা একটি ইতিবাচক সাফল্য। 

দেশে জনসংখ্যার তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ এমনিতে কম, তার ওপর প্রতিবছর আবাসনের জন্য আবাদি জমি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। তাই গাছ লাগানোর আগে কী জাতের গাছ লাগালে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ সহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সহায়ক হবে সে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। 

বর্ষা এলেই গাছ লাগানোর কথা আমরা অনেকেই ভাবি। কেউ বা বসতবাড়ির ভিটায় একটি বনজ, ফলদ কিংবা একটি ঔষধি গাছ অথবা বাণিজ্যিকভাবে বৃক্ষ বাগান অথবা জমির আইলে বা পুকুর পাড়ের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন জাতের কাষ্টল উদ্ভিদ বা ফলদ-ঔষধি গাছ রোপণের ব্যাপারে সচরাচরই আমরা বলাবলি করি। 


কোন অঞ্চলের আয়তনের পরিবেশগত ভারসাম্যে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কেবলমাত্র ৭% বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ হানিকর গাছ লাগানো হলে ও সুফলের চেয়ে কুফল বয়ে আনবে। যেমন ইউকেলিপটাসসহ, একাশিয়া, আকাশমণি, মিজ্জাম, শিশু, মেহগনি, রেইনট্রি ইত্যাদি বিদেশি জাতের গাছ আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী নয়। এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। 

এসব গাছ অতিরিক্ত পানি পোষণসহ ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মাটিকে শুষ্ক, অনুর্বর ও মরুময় করে তোলে। পুকুর পাড়ে লাগালে মাছ চাষ ব্যাহত হওয়াসহ পানিকে দূষিত করে। এসব গাছের নির্গত গ্যাসে বাতাস বিষাক্ত হওয়াতে আশেপাশে দেশীয় ফলের গাছে ফলধরা হ্রাস পাওয়াসহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সব গাছে পাখি পর্যন্ত বাসা বাঁধে না। 

মোদ্দাকথা, সীমিত জায়গাতে শুধু কাঠের হিসেব করে বিদেশি জাতের গাছ লাগানোতে হীতে বিপরীত হয়ে দেখা দিচ্ছে, যার জন্য একদিন আফসোস করতে হবে। তাই প্রস্তাব হচ্ছে:

১. কাঠ এবং ফল একই বৃক্ষ থেকে পাওয়া যাবে এমন দেশীয় জাতের গাছ লাগান, যা আমাদের আবহমান বাংলার চিরন্তন প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করবে।

২. ভেষজ ঔষধি গাছ লাগান যাতে আমাদের ভেষজ ঔষধ শিল্পের উন্নতি ও প্রসার হবে।

৩. দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশ সহায়ক দেশীয় জাতের কাঠের গাছ লাগান।

৪. বনজ বৃক্ষের উপযুক্ত স্থান বনাঞ্চল তাই বনাঞ্চলে বনজ বৃক্ষ রোপণ করুন, আর সমতলে ফলের গাছ।

৫. জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে খাদ্য, পুষ্টি প্রভৃতি চাহিদা মেটানোর বিষয়টিকে কাঠের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিন। কারণ আমাদের ভূমি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
ফলদ বাংলাদেশের আন্দোলন

ফলদ বাংলাদেশের আন্দোলন



'পাখি পাকা পেঁপে খায়'- এই বাক্য শৈশবে আমরা কে না আওড়েছি! একদিন বাংলায় এমন হাজারো পঙ্ক্তি-প্রবাদ ভরে ছিল ফলের গন্ধ-মাখামাখিতে। কারণ বাংলার ঘরে ঘরে, গ্রামে-শহরে ফল ছিল সহজাত। এখন মানুষই পায় না পাকা পেঁপে, আর পাখি তো পরের ব্যাপার। আর্থিক বিবেচনার বশে কেবল কাঠ গাছ রোপণের এক মহামারীতে পরিণত হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ। 

যেখানেই যাবেন সেখানেই কাঠ গাছের ভ্রান্ত জয়জয়কার। সেই সঙ্গে সামাজিক বনায়নের নামে মাইলের পর মাইল রাস্তা ও সরকারি জমিতে কেবল কাঠ গাছের সারি। সেখানে পাখিরা আসে না। তাতে কি মানুষের সত্যি উপকার? তাতে কি দেশ সত্যিই অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে লাভবান? উত্তর- না।

সমস্যাটা কি শুধুই অর্থনৈতিক? না। সমস্যা আমাদের ক্রমে বদলে যাওয়া জাতীয় মানসিকতার, অভ্যাসের, দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলার পলি মাটিতে সত্যিই সোনা ফলে, শুধু ফলানোর মানসিকতা দরকার। সেই অদম্য ইচ্ছা ও স্বপ্নকে বুকে নিয়ে একটি সংগঠন সারাদেশে কাজ শুরু করেছে। 

'ফলদ বাংলাদেশ' নামের এ সংগঠনটি গত চার বছর ধরে সারাদেশে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও এ সংক্রান্ত সচেতনতায় কাজ করছে। 'ফলদ বাংলাদেশ'-এর পরিকল্পনা হলো সারাদেশে অন্তত পাঁচ কোটি ফলের গাছ লাগানো। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে দেশে বহু সংগঠন, ব্যক্তি এবং সরকারি উদ্যোগে প্রচুর বৃক্ষরোপণের পরও তারা কেন বৃক্ষরোপণের কথা ভাবছে? কারণ দেশে বছরের পর বছর ধরে ভুল বনায়নের মাধ্যমে আমাদের জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খলা, পুষ্টি ও ভিটামিনের নিশ্চিত উৎসগুলো নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। 

শুধু কাঠনির্ভর বৃক্ষরোপণ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। তাই দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিটি বাড়িতে তারা সবাই মিলে ফলদ গাছ রোপণ করতে চায়। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ মাত্র একটি উদ্যোগের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই প্রতিটি মানুষ, পরিবার, সংঘ, সংস্থার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু শুরুতেই তো আর প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা যায় না। তাই শুরু থেকেই সংগঠনটি ধীরে ধীরে তাদের কর্মী সংগ্রহ এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফল গাছ লাগানোর কাজ করছে। এ বর্ষায়ও তারা থেমে নেই। কর্মীদের ব্যক্তিগত এবং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অর্থ ও চারা সহায়তায় যার যা সাধ্যমতো সংগঠনটি বিভিন্ন জেলায় বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পূর্বপরিকল্পিত গ্রামগুলোতে ফল গাছ রোপণের জন্য কাজ করছে। বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।

এখন আসা যাক মূল কথায়। কেন বাংলাদেশের জন্য জাতীয় বৃক্ষরোপণে এ মুহূর্ত থেকে কাঠ গাছকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত হওয়া জরুরি? মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, রেইন-ট্রি, একাশিয়াই এখন আমাদের দেশের ৭০ ভাগ বৃক্ষ। কিন্তু এ গাছগুলোর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি এসব গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য উল্টো ক্ষতিকারক। অথচ দেশীয় ফল বৃক্ষগুলো হাত ভরে দেয় আমাদের। যদি আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের কথাই ধরি, এর সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য- কাঠ অতি উন্নতমানের, পাতা পশুখাদ্য, ফল উপাদেয় পুষ্টিকর খাবার। তবু লাভজনক বিবেচনায় আমরা বাড়িতে-সড়কে রোপণ করছি মেহগনি। 

বাস্তবে দেখা গেছে যে কোনো হিসাবে ২০ বছরে একটি মেহগনি গাছ থেকে যদি ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়, কাঁঠাল থেকে আসবে নূ্যনতম ৬০ হাজার টাকা। আর গাছ তো শুধু টাকা নয়, কাঠ নয়; গাছ একটি প্রাণ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। ফলদ বৃক্ষের সঙ্গেই সেই সম্পর্ক হয়ে ওঠে মধুময়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ফলের দাওয়াত দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ, যা এখন বিস্মৃতপ্রায়।

তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা ফলদ বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টির বার্ষিক ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারি সহজেই। উর্বর মাটি ও উপযোগী জলবায়ু থাকা সত্ত্বেও প্রচুর ফল আমদানির কারণে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ এই কোটি কোটি টাকার বাজার সহজেই দেশীয় সুস্বাদু ফলের হতে পারে। যা অনায়াসে আমাদের পুষ্টি ঘাটতি, রসনা তৃপ্তি, আর্থিক দৈন্য ঘুচাতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আম, লিচু, জাম, সফেদা, কাঁঠাল, গাব, তাল, তেঁতুল, জলপাই ছাড়াও বিভিন্ন ফল এবং ঔষধি গাছ হবে উন্নতমানের কাঠেরও উৎস।

আমাদের দেশে প্রচলিত যে কোনো কাঠ গাছের তুলনায় ফলের গাছে অন্তত তিন গুণ বেশি লাভ। পরিবেশের জন্যও উপকারী। আর স্থানীয়ভাবে ফলের পর্যাপ্ত জোগানই পারে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত অভিশাপ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

আরেকটি মজার কিন্তু হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো, অধিকাংশ কাঠের গাছে পাখির কোনো খাদ্য নেই। পাখির বাসা বাঁধা এবং ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নেওয়ার মতো উপযোগী ডালপালা নেই। তাই আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে দেশীয় পাখি, যা আমাদের ফসল উৎপাদনে ফেলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মানুষ বন উজাড় করে যতটা না পাখি তাড়িয়েছে- খাদ্যাভাবে, ফল না পাওয়ায় তারা নিজেরাই এ তল্লাটে আনাগোনা কমিয়ে দিয়েছে তার চেয়ে বহু গুণ।

দেশের ৪৭ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পর্যাপ্ত ফল উৎপাদনের মাধ্যমে যার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। কাজেই দেশ এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়ে শুধু কাঠের গাছের বদলে ব্যাপক হারে ফলদ বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন, যা এখন আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তাই কয়েকজন তরুণ মিলে গড়ে তোলা 'ফলদ বাংলাদেশ' সংগঠনটির আহ্বান- 'ফল গাছ লাগান, দেশ বাঁচান'। তাদের আহ্বান- আসুন, সবাই মিলে করি 'ফলদ বাংলাদেশ' আন্দোলন। আসুন প্রতি বর্ষায় নিজের ও আশপাশের বাড়ির আঙিনায় ফলের চারা রোপণ করি। 

কেন ফলবৃক্ষ রোপণ
- দেশের পুষ্টি ঘাটতি কমানো।
- ফলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
- স্থানীয়ভাবে ফলের জোগান বৃদ্ধি করে ফলে বিষ বা ফরমালিন প্রয়োগ বন্ধ করা।
- পাখিদের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- বৃক্ষকে শুধু কাঠ আর টাকা হিসেবে দেখার প্রবণতা ও কুফল হ্রাস করা।
- ফলবৃক্ষ মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে, আত্মীয়-বন্ধুদের ফলের নিমন্ত্রণ দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা।
- নিঃস্বার্থভাবে অপরের মঙ্গল কামনার অভ্যাস তৈরি করা।
- বিদেশি ক্ষতিকর বৃক্ষের বদলে আমাদের উর্বর মাটিতে উপযোগী বৃক্ষকে প্রাধান্য দেওয়া।
- ফলদ বৃক্ষের বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
- বিষমুক্ত বিশুদ্ধ পুষ্টি লাভের স্বাধীন ক্ষেত্র তৈরি করা।


পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন

- ইউক্যালিপটাস। কারণ অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী, নিম্নমানের কাঠ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
- রেইন-ট্রি। কারণ এই আগ্রাসী গাছ অন্য গাছকে বাড়তে দেয় না, ঝরা পাতা ফসল ও মাছের জন্য ক্ষতিকর, কাঠও নিম্নমানের।
- মেহগনি। এর ফল বিষাক্ত। পুকুরের পানিতে পড়লে মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অত্যধিক রোপিত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই।
- শিশু। কারণ এর কাঠ মাঝারি মানের, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।
- একাশিয়া। কারণ এর মাইক্রোস্কোপিক রেণু অ্যালার্জি/অ্যাজমার অনুঘটক, কাঠ মাঝারি মানের, গঠন আঁকাবাঁকা, বাংলাদেশে অতিরিক্ত রোপিত।
উদ্ভিদকুল

উদ্ভিদকুল


                                           টগর


উদ্ভিদকুল (Flora)  কোনো দেশ বা অঞ্চলের উদ্ভিদ সম্পদ। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৬০০০ প্রজাতির গাছগাছালি। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রজাতি বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। আটটি প্রজাতি একান্তভাবেই বাংলাদেশের স্থানীয় (endemic)। বাংলাদেশের উদ্ভিদ প্রজাতির প্রায় ৫,০০০টি  আবৃতবীজ উদ্ভিদ (সপুষ্পক উদ্ভিদ) এবং চারটি অনাবৃতবীজ উদ্ভিদ। এদেশে যে ৯৫টি প্রজাতি বিপন্ন বলে বিবেচিত তার মধ্যে ৯২টি আবৃতবীজ এবং তিনটি অনাবৃতবীজ উদ্ভিদ। কেবল স্বাদুপানির পরিবেশ থেকেই প্রায় ৩০০ প্রজাতির শৈবালের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অল্প লোনা পানি এবং সামুদ্রিক আবাসে এদের আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে। দেশের ছত্রাক সম্বন্ধে তথ্য এখনও সম্পূর্ণ নয়। বাংলাদেশে প্রায় ২৫০ প্রজাতির  ব্রায়োফাইট (bryophyte) রয়েছে এবং এদেশে প্রাপ্ত প্রায় ২৫০টি টেরিডোফাইট (pteridophyte) প্রজাতির মধ্যে ২৩০টি ফার্নজাতীয়।


গবেষণা ও সমীক্ষা পূর্ব ভারতে, বিশেষ করে সিলেট,  সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম থেকে পর্যাপ্ত সংগ্রহসহ ব্যাপক উদ্ভিদ সন্ধান চালান যোসেফ ডালটন হুকার (Joseph Dalton Hooker, ১৮১৭-১৯১১) ও তাঁর সহকর্মী টমাস টমসন (Thomas Thomson, ১৮১৭-১৮৭৮)। ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত Himalayan Journal-এ হুকার ধারাবাহিকভাবে ভ্রমণকথা ও সেখানকার উদ্ভিদজগতের বর্ণনা লিখেছেন। ১৮৫০ সালের ১ মে কলকাতা থেকে এক দীর্ঘ নৌযাত্রায় তিনি পাবনা, ঢাকা ও মেঘনা নদী পেরিয়ে ছাতক ও সিলেট পৌঁছেন। ১৮৫১ সালের জানুযারি মাসে কলকাতা ফেরার পথে তিনি কিছুটা নৌকায়, কিছুটা পায়ে হেঁটে সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম, হাতিয়া, সুন্দরবন ও ঢাকা অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। হুকার ভারত উপমহাদেশের উদ্ভিদ ভূগোল চর্চারও অগ্রদূত। কয়েকজন প্রখ্যাত উদ্ভিদবিদের সহযোগিতায় তিনি তাঁর সাত খন্ডের রচনা Flora of British India (১৮৭২-১৮৯৭) প্রকাশ করেন। Botanical Survey of India-র প্রথম পরিচালক স্যার জর্জ কিং (১৮৪০-১৯০৪) একান্তভাবে বঙ্গোপসাগরের পূর্বাঞ্চল থেকে উদ্ভিদ সংগ্রহের জন্য ১৮৯২ সালে কিছু লোক নিয়োগ করেন। তিনি Annals of the Royal Botanic Gardens, Calcutta নামে শ্রেণিবিন্যাস গবেষণার এক সচিত্র মনোগ্রাফ প্রকাশেরও উদ্যোক্তা।



কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিতের অধ্যাপক (১৮৬৬) চার্লস ব্যারন ক্লার্ক (Charles Baron Clarke, ১৮১২-১৯০৯) পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গের স্কুল পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে আড়াই বছর নৌকায় ভ্রমণ করে প্রায় ৭০০০ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন। তিনি বরিশাল, পূর্ব সুন্দরবন, ঢাকা, যশোর ও চট্টগ্রাম থেকেও নমুনা সংগ্রহ করেন। ১৮৮৩ সালে আসামে বদলি হলে তিনি গোটা প্রদেশ পায়ে হেঁটে বিপুল সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করেন। ক্লার্ক Commelinaceae, Cyperaceae ও Scrophulariaceae গোত্রের আগাছার দিকে বেশি নজর দেন। ফলে এসব উদ্ভিদের ওপর একটি মনোগ্রাফ রচনা করতে সমর্থ হন।


রবার্ট লরেন্স হেইনিগ (Robert Lawrence Heinig) ১৮৯৫ সালে ভারতে পৌঁছে চট্টগ্রাম ও সুন্দরবনে বনকর্তা থাকাকালে বনজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করেন এবং এগুলি সুন্দরবনের বনসংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা ও তাঁর A list of Plants of the Chittagong Collectorate and Hill Tracts (১৯২৫) সংকলনভুক্ত হয়। জে.এম কোয়ান (JM Cowan) ১৯২৬ সালে The Flora of Chakaria Sundarbans প্রকাশ করেন যখন সেটি ছিল এক সমৃদ্ধ উপকূলীয় অরণ্য। আই.এইচ বার্কিল (IH Burkil, ১৮৭০-১৯৬৫) বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া-এর অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদ হিসেবে নিজ দায়িত্ব পালনের পর ডেভিড প্রেইনের (David Prain, ১৮৫৭-১৯৪৪) সঙ্গে গাছ-আলুর (Dioscorea) এশীয় প্রজাতিগুলির পুনঃপর্যালোচনার কর্মকান্ডে শরিক হন। গবেষণা নিবন্ধটি Annals of the Royal Botanic garden, Calcutta (১৯৩৬, ১৯৩৮) প্রকাশিত হয়। সুদক্ষ উদ্যানবিদ যোসেফ প্যাক্সটন (Joseph Paxton) বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) থেকে Amherstia nobilis গাছের বীজ সংগ্রহের জন্য জন গিবসনকে (John Gibson) ভারতে পাঠান। কলকাতা পৌঁছে তিনি নৌকাযোগে মাথাভাঙ্গা ও  গঙ্গা নদী পেরিয়ে ঢাকা আসেন এবং সেখান থেকে মেঘনা ও  সুরমা নদী দিয়ে ছাতক পৌঁছেন। অতঃপর খাসিয়া পাহাড় থেকে এক  নৌকা বোঝাই উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করেন যাতে ছিল মূলত  অর্কিড


এই অঞ্চলে প্রথম দিকের চায়ের আবাদ ব্যবসায়িকভাবে গড়ে ওঠে নি। ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ (Nathaniel Wallich, ১৭৮৬-১৮৫৪) কলকাতা উদ্যানের অধ্যক্ষ থাকাকালে তাঁর নেতৃত্বে আরেক উদ্ভিদবিদ উইলিয়ম গ্রিফিথ (William Griffith, ১৮১০-১৮৪৬) ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী জন ম্যাকক্লেল্যান্ড (John McClelland) সহ একটি সন্ধানীদল কী পরিস্থিতিতে বনে  চা গাছ জন্মে তা দেখার জন্য ১৮৩৫ সালে আসাম মালভূমি সফর করেন। ক্যান্টন থেকে চা বীজের প্রথম চালান আসে এবং সাদিয়ার কাছে নার্সারির স্থান নির্বাচিত হয়। পরবর্তীকালে নবগঠিত আসাম কোম্পানি চা বাগানগুলির মালিকানা পায় এবং ১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৫ সালে বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলার চান্দখানি পাহাড়ে বুনো চায়ের সন্ধান মেলে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে সিলেট শহর থেকে দু’মাইল দূরে মালনিছড়াতে।
আঠারো শতকের শেষের দিকে কলকাতায় ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বার্মা থেকে আনা সেগুন (Tectona grandis) দিয়ে মাল পরিবহনের জাহাজ তৈরি হতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সামরিক বিভাগের সচিব রবার্ট কিডের (Robert Kid) সুপারিশে কলকাতার সন্নিকটে হুগলি নদীর তীরে কলকাতা উদ্যানের একাংশে ১৮৮৭ সালে পরীক্ষামূলক সেগুনচাষ শুরু হয়। বার্মা থেকে আনা বীজ দিয়ে কাপ্তাই ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় সেগুন গাছ রোপণ শুরু হলে বনাঞ্চলে এ প্রথম বিদেশি প্রজাতির সূচনা ঘটে।


উদ্ভিদচর্চায় সার্জন ও মিশনারিদের অবদান  বাংলাদেশসহ পূর্ব-ভারত ও লাগোয়া অঞ্চলে উদ্ভিদ সমীক্ষা শুরু হয়েছিল ১৮ শতকের শেষার্ধে কলকাতায় ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলের বাসভবন প্রতিষ্ঠার পর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে কর্মরত স্কটিশ সার্জন  উইলিয়ম রক্সবার্গ (William Roxburgh, ১৭৫১-১৮৫১) ছিলেন অগ্রণী উদ্ভিদ পর্যবেক্ষক। তিনি Hortus Bengalensis (১৮১৪)-এর রচয়িতা, যার পরবর্তী সংশোধিত সংস্করণ Flora Indica (১৮৩২)। তৎকালীন ভারতের উদ্ভিদবিদ্যায় তাঁর মূল্যবান অবদানের সুবাদে তিনি ভারতীয় উদ্ভিদবিদ্যার জনক হিসেবে স্মরণীয়।
ডেনমার্কের মিশনারি উইলিয়ম কেরী (William Carey, ১৭৬১-১৮৩৪) কলকাতা আসেন ১৮ শতকের শেষ নাগাদ। বাংলার উদ্ভিদবিদ্যা ও উদ্যানবিদ্যা গবেষণা এবং কাগজ তৈরি ও মুদ্রণের অগ্রদূত হিসেবে তিনি বাংলার ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। কেরি ১৮৩২ সালে রক্সবার্গের ৩ খন্ডের Flora Indica সম্পাদনা করেন। নীলকর হিসেবে মালদহে থাকাকালে তিনি বাংলা শিখেন। কেরি ভারতে অ্যাগ্রো-হর্টিকালচারাল সোসাইটিরও প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর শিষ্য ভয়ট (JO Voigt) কেরির বাগানের দায়িত্ব নেন, একটি হার্বেরিয়াম গড়ে তোলেন এবং পরবর্তীকালে  শ্রীরামপুর ও কলকাতার বাগানগুলির গাছপালার তালিকার সংকলন হিসেবে Hortus Subarbanus Calcuttensis প্রকাশ করেন। ডেনমার্কের আরেক সার্জন ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ (Nathaniel Wallich, ১৭৮৬-১৮৫৪) কলকাতা বোটানিক গার্ডেনের সুপারিনটেনডেন্ট থাকাকালে পূর্ব-ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ উদ্ভিদ সংগ্রহ করেন এবং নিজেই সেগুলি লিথোগ্রাফির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করেন যা Wallich’s Catalogue নামে পরিচিত এবং আজও সন্ধানসূত্র হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরেক স্কটিশ উদ্ভিদবিদ ফ্রান্সিস হ্যামিলটন (Francis Hamilton, ১৭৬২-১৮২৯) বর্তমান ফেনী জেলার লক্ষ্মীপুর থেকে ৬ মাইল উত্তরে পাথুরাহাট থাকাকালে সুন্দরবনের গাছপালা সংগ্রহ করেন। এদেশে তাঁর উদ্ভিদ জরিপ মূলত মেঘনা নদীর পূর্বাঞ্চলে সীমিত থাকে এবং ১৭৯৮ সালে চট্টগ্রাম থেকেও উদ্ভিদ নমুনা সংগ্রহ করেন। জরিপকালীন মন্তব্যে তাঁর লেখা ঐতিহাসিক, জাতিতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক তথ্যাদি পরে Edinburgh Journal of Science (১৮২৫-২৬) প্রকাশ করে। তাঁর জরিপকালে রেকর্ডকৃত নিবন্ধ   A Journey from Kutubdia to Comilla, ১৭৯৯ এ অঞ্চলের উদ্ভিদ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। পরে ১৮০৭ সালে তাঁকে প্রত্যেকটি জেলার বাসিন্দার সংখ্যা ও অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, রোগবালাই, শিক্ষার স্তর ছাড়াও ভূসংস্থান,  জলবায়ু, আবহতত্ত্ব,  ইতিহাস ও পুরাতত্ত্বের বিবরণ প্রস্ত্ততের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বিরাট কাজ শুরু হয়েছিল তৎকালীন রংপুরের উত্তর-পূর্ব এলাকা দিনাজপুরে ১৮০৭ সালে।


১৮১৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিকিৎসা বিভাগে যোগদানকারী আরেক ব্রিটিশ সার্জন রবার্ট উইট (Robert Wight, ১৭৯৮-১৮৭২) সখের বশে গাছপালার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি লিথোগ্রাফি শেখেন এবং ১৮৫৩ সালে ৬ খন্ডে প্রকাশিত তাঁর Icones Plantarum Indiae Orientalis (পূর্ব-ভারতের গাছপালার চিত্র) গ্রন্থমালায় তা ব্যবহার করেন।


হিউ ক্লেগহর্ন (Hugh Cleghorn) সিভিল সার্জন হিসেবে ভারতে এসে এদেশের উদ্ভিদ-বাস্তব্যবিদ্যার পথিকৃৎ হন। তিনি গুল্মজাতীয় গাছপালার বাস্তব্যবিদ্যা এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এগুলির ব্যবহার নিয়ে কাজ করেছেন ও পরবর্তীকালে বালু-বাধক উদ্ভিদ সম্পর্কে  নিবন্ধও লিখেছেন।
উইলিয়ম গ্রিফিথ (William Griffith, ১৮১০-১৮৪৫), নৌকাযোগে কলকাতা থেকে সংগ্রহাভিযান শুরু করে পাবনায় পৌঁছেন ৯ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৫, অতঃপর নদী ও বিল পেরিয়ে সিরাজগঞ্জে এবং সেখান থেকে জামালপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাটিতে ময়মনসিংহ পৌঁছেন। তারপর হবিগঞ্জ থেকে সুরমা নদী উজিয়ে ছাতক এবং সেখান থেকে চেরাপুঞ্জি। নৌভ্রমণের সময় হাওর-বাওড়ের জলজ ও জলাভূমির উদ্ভিদকুলের তালিকা প্রস্ত্তত করেন। এ ভ্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আসামে চা চাষ করা যায় কিনা তা দেখা। তিনি ১৯৩৮ সালে ফরিদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত নৌযাত্রার বর্ণনা লিখেছেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অগ্রাহ্য করে গ্রিফিথ আসামের উদ্দেশ্যে সুরমা নদী বেয়ে তেরিয়াঘাট পৌঁছেন। উদ্ভিদবিদ হিসেবে সাড়ে বারো বছরের সংক্ষপ্তি কর্মজীবনের সমুদয় শক্তি তিনি সন্ধান, সংগ্রহ, সমীক্ষা ও চিত্রাঙ্কনে ব্যয় করেছেন।


ডেভিড প্রেইন (David Prain, ১৮৫৭-১৯৪৪) ১৮৮৩ সালে এবার্ডিন ও এডিনবরা থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রি লাভের পর মেঘনার পূর্বতীরের লক্ষ্মীপুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কারাখানায় কর্মরত হন। তিনি  কলকাতা বোটানিক গার্ডেন ও বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ারও সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন। তাঁর রচনা Bengal plants  (১৯০৩) ও Flora of Sundarbans (১৯৩০) আজও যথেষ্ট সমাদৃত।  [মোঃ সালার খান]
আরও দেখুন রক্সবার্গ, উইলিয়ম; কলকাতা বোটানিক গার্ডেন



উদ্ভিদবৈচিত্র্য  হুকারের মতে (১৮৫৪) তৎকালীন বাংলা প্রদেশে ছিল মাত্র দুটি উদ্ভিদ-ভৌগোলিক  বিভাগ ১. গাঙ্গেয় সমতল ও ২. সুন্দরবনের উপকূলীয় অরণ্য। বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫০০০। অব্যাহত নতুন গাছপালা প্রবর্তনসহ এতে স্থানীয় ও বিদেশি উভয় প্রজাতিই অন্তর্ভুক্ত।


সমভূমির উদ্ভিদবৈচিত্র্য  ব্যাপক চাষাবাদের অনুকূল বাংলাদেশের সমভূমি উর্বর পলিমাটির জন্য বিখ্যাত। প্রান্তিক ভূমি (চর, আইল, পথের পাশে) ও পতিত জমিতে দেশি-বিদেশি অঢেল আগাছা জন্মে। ঘেঁটু/ভাট (Clerodendrum viscosum), ঘাঘরা (Xanthium strumarium), আসশেওড়া/দাঁতমর্দন (Glycosmis pentaphylla), হাতিশুঁড় (Heliotropium indicum), সানচি (Alternanthera sessiles), ভুঁইওকড়া (Lippia nudiflora), পানিমরিচ (Croton bonplandianum), তারালতা (Mikania cordata) ইত্যাদি আগাছা প্রায় সর্বত্র চোখে পড়ে। নানা ধরনের জলাশয় ও জলাভূমিতে অনেক প্রকার  জলজ উদ্ভিদ যেমন, ঘেচু (Potomageton),  ক্ষুদিপানা (Lemna), টোপাপানা (Pistia), ঝাঁঝি (Hydrilla), পাতা ঝাঁঝি (Vallisnaria) এবং বিভিন্ন পতঙ্গভুক উদ্ভিদ, যেমন ছোট ঝাঁঝি (Utricularia) ইত্যাদি জন্মাতে দেখা যায়। Salvinia ও Azolla-র মতো ভাসমান ফার্ন ডোবা, খাল, পুকুর ইত্যাদি ভরে রাখে। প্রায় সারাদেশেই কচুরিপানার (Eichornia crassipes) প্রাচুর্য লক্ষণীয়। দেশের নিম্নাঞ্চল গোটা মৌসুমি ঋতুতে  শাপলা (Nymphaea pubescens), শালুক (N. stellata) ও পদ্ম (Nelumbo nucifera) অপরূপ হয়ে ওঠে।
ঘাঘরা


নল (Erianthes rivenae), খাগড়া (Phragmites karka), বড়-নল (Arundo domax), কাশ (Saccharum spontaneum) ইত্যাদি বড় আকারের তৃণজাতীয় উদ্ভিদে হাওর-বাঁওড় ও নদীতীর ছেয়ে থাকে। অনেক সময়ে এগুলির মধ্যে জন্মে হোগলা (Typha angustata), উলু (Imperata cylindrica) ও বেনা জাতীয় তৃণের (Cyperaceae) নানা প্রজাতি।
 
বনভূমির উদ্ভিদবৈচিত্র্য  দেশের সর্বত্র বিক্ষিপ্ত গ্রামীণ আবাসস্থল ঘিরে থাকা গাছগাছড়া নিয়ে গড়ে ওঠে বসতবাড়ির বন (homestead forests)। এগুলিতে রয়েছে কলা (Musa species) ও বাঁশঝাড় (Bambusa species); সঙ্গে কিছু ফলগাছ (আম, কাঁঠাল, বেল, সুপারি, নারিকেল, তাল, ইত্যাদি), জ্বালানির জন্য গাছ (বরুন, কড়ই) এবং বিভিন্ন দারুবৃক্ষ (দেবদারু, ছাতিম ইত্যাদি)।
 
গোলপাতা

বাংলাদেশের উপকূল প্রায়শ সুন্দরবন নামে পরিচিত, রায়মঙ্গল ও অন্যান্য শাখানদীর মোহনায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। সেখানকার সুন্দরি (Heritiera fomes) ও গেওয়া (Excocearia agallocha) প্রজাতির সঙ্গে ভিন্ন মাত্রায় মিশে আছে কাকরা (Bruguiera gymnorhiza), বাইন (Avicennia species), পসুর (Carapa species) ও কেওড়া (Sonnerata species)। অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত নদীতীর ও খালপাড়ের খোলা জায়গায় বনের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য সেখানকার দুটি দলবদ্ধ পাম-প্রজাতি গোলপাতা (Nypa fruticans) ও   হেন্তাল (Phoenix paludosa)। কাদা-চর ও খালপাড়ে জন্মে কাঁটাভরা হারগজা (Alanthus ilicifolius) এবং ঝাড়-বাঁধা ভোলা (Hibiscus tiliaceous)। এ বনে নানা প্রজাতির ঘাস, অর্কিড ও ফার্ন যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও বাঁশের অনুপস্থিতি ম্যানগ্রোভ বাস্ত্ততন্ত্রের একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
 
শালুক


সিলেটের প্রাকৃতিক বনে ট্রি-ফার্নের (Cyathaea species) উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এ অঞ্চলের হাওরের উদ্ভিদকুল মিঠাপানির বাদা-বনের বৈশিষ্ট্যধর, তাতে আছে হিজল (Barringtonia acutangula), করঞ্জা (Poungamia glabra) এবং অসংখ্য ডুবন্ত ও ভাসমান জলজ উদ্ভিদ।
সমতল বনভূমির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহের শালবন। এ বনের সিংহভাগ শালের (Shorea robusta) সঙ্গে আছে বহেড়া (Terminalia belerica), হরীতকী (T. chebula--), চালতা (Dillenia pentagyna), কড়ই (Albizia spp), সোনালু (Cassia fistula), কুরচি (Holarrhena antidysenterica), এবং কুম্ভি (Careya arborea)। বৃক্ষতলের গাছপালা একদা পর্যাপ্ত ও বিভিন্ন জাতের ছিল, যেমন আদা জাতীয় (প্রধানত Curcuma aromatica), ভূমিজ অর্কিড, পাম (Phoenix acaulis), কয়েক ধরনের তৃণ ও  আগাছা প্রজাতি। লতাগুলি খুবই লম্বা, প্রধানত গোয়ালিলতা (Butea parviflora), বেহুর (Bauhinia vahlii), কুমারিকা (smilax macrophylla), চাপড়আলু, (Dioscorea species) এবং Vitaceae গোত্রের কিছু প্রজাতি। ক্রমাগত মানুষের হস্তক্ষেপ (প্রধানত গাছকাটা, ঝরাপাতা কুড়ানো ও অত্যধিক সংগ্রহ) এ বনের উদ্ভিদবৈচিত্র্যের মূল বিপদ।

 
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনগুলি নানাভাবে চিরসবুজ ও অজস্র পত্রমোচী প্রজাতিসহ অর্ধপত্রমোচী বন হিসেবে চিহ্নিত। অবৈধ গাছকাটা, জুমচাষ ও অন্যান্য আদিবাসী কার্যকলাপের জন্য প্রকৃতি, প্রজাতি প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্যের জন্য একদা প্রসিদ্ধ এ বনগুলি এখন বিপজ্জনক হারে সংকুচিত হচ্ছে। বনের উপরিভাগে (top storey) আছে গর্জন  (Dipterocarpus species), তেলসুর (Hopea odorata), চাপালিশ (Artocarpus chaplasha), চুন্দুল (Tetrameles nudiflora) ও বিভিন্ন প্রজাতির কড়ই (Albizia)। নিচের তলার (lower storey) প্রজাতির মধ্যে জারুল (Lagerstroemia speciosa), তুন (Toona ciliata), জাম (Syzygium species), জলপাই (Elaeocarpus floribundas) ও glochidion উল্লেখ্য। কাষ্ঠলতা (lianas), পরাশ্রয়ী (মূলত অর্কিড, ফার্ন ও সপত্রিক মস) উদ্ভিদ ও বৃক্ষতলের আগাছা অঢেল। বড় বড় বাঁশবনের জন্য কাসালং বনে প্রধানত মূলি (Meloccana baccifera), মিরতিংগা (Bambusa tulda) ও অরাবাঁশ/লাঠিবাঁশ (Dendrocalamus longispathus) রয়েছে। তৃণভূমির আদল চোখে পড়ে নদীতীরে ও নদীর কিনারের খোলা জায়গায়। এসব জায়গায় আছে খাগ (Saccharum spontaneum), উলু (Imperata cylindrica) ও বেনা (Vetiveria zizanoides)।

 
সামুদ্রিক উদ্ভিদবৈচিত্র্য  বঙ্গোপসাগরের শৈবাল, বিশেষত  মোহনা ও সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ যথেষ্ট সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়, কিন্তু অতিমাত্রায় সংগ্রহ ও যদৃচ্ছা আহরণের ফলে এ সম্পদও আজ বিলীয়মান।
কৃষিফসলের বৈচিত্র্য  বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং পৃথিবীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ফসলের জার্মপ্লাজম সম্পদে সমৃদ্ধ। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধান, পাট, আখ, চা, তামাক, আলু, ডাঁটাশাক, কলা, বেগুন, মরিচ, তুলা, শিম, লেবু, লিচু, কচু, গাছআলু, বেত, বাঁশ ইত্যাদি। ফসলের আধুনিক জাত গ্রহণের ফলে (ও একক চাষের জন্য) কতটা বংশাণুগত অবক্ষয় ও চাষের জমির মানের অবনতি ঘটেছে সে হিসাব আজও যথাযথভাবে নির্ণয় করা হয় নি। সবগুলি  ফসল প্রজাতির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাগ্রোইকোটাইপ (agroecotype) ও তাদের অভিযোজ্যতা, ভূমিজ জাতিসমূহ ও তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি ‘বংশাণু-তল্লাশের’ (gene hunting) মাধ্যমে আজও মূল্যায়িত হয় নি, যা এসব ফসলের জন্য আবশ্যক। জানা যায় যে ধানের প্রায় ১০,০০০ বিভিন্ন জাত বা Cultivar রয়েছে। পক্ষান্তরে, জীন উপাদান বিশেষত বাংলাদেশে বিদ্যমান ফসল-প্রজাতিগুলির বন্য জ্ঞাতিদের সঠিক পরিচয় এখনও অজ্ঞাত। বংশাণুগত প্রকারভেদ যে  কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারে তা অনস্বীকার্য এবং বর্তমান জীব প্রকৌশলগত নতুন প্রযুক্তিগুলি বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নতিতে উদ্দীপনা যোগাচ্ছে। বিদ্যমান জীববৈচিত্র্যের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনাই কেবল স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।  [এ.বি.এম এনায়েত হোসেন]

 
অর্থকরী উদ্ভিদ  ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পে ব্যবহূত উদ্ভিদ বা উদ্ভিদজাত দ্রব্য। সারা পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী উদ্ভিদ প্রজাতি আছে প্রায় ৫০০০। বাংলাদেশেও পর্যাপ্ত অর্থকরী উদ্ভিদ রয়েছে। এদেশের মোট সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে ৩২০টি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলির মধ্যে ১৫০টি ফসল প্রজাতিই মুখ্য, বাকিগুলির বিপণন নির্দিষ্ট এলাকা বা স্থানীয় লোকদের মধ্যে সীমিত। অর্থকরী উদ্ভিদের মধ্যে ধান, গম ও জোয়ারের মতো দানাশস্যের চাষ ব্যাপক। ধানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী উদ্ভিদ পাট, চা এবং আখ। পাট ও চা প্রধান অর্থকরী ফসল। অন্যান্য অর্থকরী উদ্ভিদের মধ্যে আছে তেলবীজ, আলু, মিষ্টিআলু, তামাক, তুলা ও কয়েক জাতের ডাল। ফল হিসেবেও অনেকগুলি প্রজাতির চাষ হয়। কাঁঠাল ও আম এদেশে পর্যাপ্ত জন্মায়। অন্যান্য সাধারণ ও অর্থকরী ফল  কালোজাম, পেয়ারা, আনারস, লিচু, কলা, নারিকেল, কুল, পেঁপে, আমড়া, নানা জাতের লেবু, তরমুজ, শসা, আতা ও শরিফা, বেল ও ডালিম। তিসি, সরিষা, তিল, চীনাবাদাম, কুসুম এগুলিই প্রধান তেলপ্রদায়ী ফসল। শাকসবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য লাউ, কুমড়া, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়শ, পেঁপে, শিম, পালং, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ডাঁটা ও লতালু। মূল্যবান কাঠ প্রদায়ী বৃক্ষের মধ্যে সেগুন, গর্জন, শাল, গামারি, সুন্দরি, কড়ই, রেইনট্রি, সিভিট, জারুল, শিশু ও তেলসুর উল্লেখযোগ্য। চর্ব্য হিসেবে ব্যবহূত সুপারিও গুরুত্বপূর্ণ। আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, ধনে, কালোজিরা, মরিচ, গোলমরিচ, মেথি, দেশি দারচিনি ইত্যাদি মসলাও অর্থকরী। বাঁশ ও বেতের অনেকগুলি প্রজাতি নিত্যদিনের নানা পণ্য তৈরিতে ব্যবহার্য। কাগজ ও মন্ড প্রস্ত্ততের প্রধান কাঁচামাল কয়েক প্রজাতির বাঁশ, গেওয়া ও কড়ই গাছ। খয়ের গাছ থেকে রঞ্জক পাওয়া যায়। ডালিয়া,  গোলাপ, হাসনাহেনা, মালতি, জুঁই, গন্ধরাজ, গাঁদা, জবা, জিনিয়া ইত্যাদি বাগানের উল্লেখযোগ্য ফুল। প্রধান ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে আছে সর্পগন্ধা, হরীতকী, কুমারিকা, ঘৃতকুমারি, যষ্টিমধু, কুরচি, নক্সভূমিকা, কালমেঘ, নিম, বিষকাঁটালি ও বাসক। মিষ্টি রসের জন্য তাল ও খেজুর প্রসিদ্ধ। অপুষ্পক উদ্ভিদেরও অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে, যেমন  মাশরুম ও সামুদ্রিক শৈবাল Hypnea। ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদের কিছু প্রজাতি সবজি ও বাহারি গাছ হিসেবে আদৃত যেমন Selaginella, Nephrolepis, Adeantum ও Asplenium। সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু বিদেশি অর্থকরী উদ্ভিদের চাষ চলছে যেমন  ভুট্টা, সয়াবিন, মেহগনি, অ্যাকাসিয়া, সূর্যমুখী, আঙুর ও রাবার। [মোস্তফা কামাল পাশা]

 
ভেষজ উদ্ভিদ  ভেষজ গুণসম্পন্ন এবং পশু ও মানুষের রোগনিবারক উদ্ভিদ। এ উপমহাদেশের লোকচিকিৎসার সংহিতায় (Materia Medica) ভেষজ উদ্ভিদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২০০০ বলে উল্লেখ আছে। এগুলির মধ্যে বাংলাদেশে জন্মে এমন ৪৫০-৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদ এ পর্যন্ত শনাক্ত করা গেছে।
সারণি ১ বাংলাদেশের সচরাচর ব্যবহূত কতিপয় ভেষজ উদ্ভিদ

স্থানীয় নাম
বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহার
উলটকম্বল Abroma augusta রজোদ্দীপক; ঋতুবদ্ধতা ও রজঃকষ্টে ব্যবহার্য।
মুক্তাঝুরি Acalypha indica শ্লেষ্মারেচক, রমনকারক, মূত্রবর্ধক; ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানিতে ব্যবহার্য।
আপাঙ  Achyranthes aspera বিরেচক, মূত্রবর্ধক, প্রসবত্বরক, রক্তের শর্করা বৃদ্ধি প্রশমক, কিডনির বৈকল্যজনিত শোথ, অর্শ, ফোঁড়া ও অন্যান্য ত্বক-স্ফোটে ব্যবহার্য।
বাসক Adhatoda zeylanica  শ্লেষ্মারেচক, ক্লোমনালী-প্রসারক; কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ও শ্বাসরোগে ব্যবহার্য।
বেল Aegle marmelos  হজমিকারক, ক্ষুধাবর্ধক, মৃদু-ভেদক, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয়ে ব্যবহার্য।
রসুন Allium sativum বায়ুরেচক, মূত্রবর্ধক, উচ্চ রক্তচাপ প্রশমক; অগ্নিমান্দ্য, রক্তচাপাধিক্য ও বহুমূত্রে ব্যবহার্য।
ছাতিম Alstonia scholaris জ্বরঘ্ন, কোষ্ঠবর্ধক, কৃমিনাশক, রক্ত চাপরোধক, পালাক্রমিক রোগ, জ্বর, উচ্চরক্তচাপ, উদরাময় ও আমাশয়ে ব্যবহার্য।
কালমেঘ Andrographis paniculata  জ্বরনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, কৃমিনাশক, পিত্তনিঃসারী; যকৃতের রোগ, শূল, জ্বর, উদরাময় ও অগ্নিমান্দ্যে ব্যবহার্য।
শতমূলী  Asparagus racemosus শিকড় কামোদ্দীপক, মূত্রবর্ধক, স্তন্যক্ষরণ বর্ধক; বহুমূত্রে ব্যবহার্য।
নিম Azadirachta indica জীবাণুনাশক; জ্বর, পানিবসন্ত, ফোঁড়া, আলসার, একজিমা ও চর্মরোগে ব্যবহার্য।
ব্রাহ্মীশাক Bacopa monniera রক্তশোধক, মস্তিষ্ক-স্নায়ু-হার্দ্য টনিক, মূত্রবর্ধক এবং মৃগীরোগে ব্যবহার্য।
নয়নতারা Catharanthus roseus ব্লাডক্যানসার, হজকিনের রোগ (ঐড়ফমশরহ’ং উরংবধংব)  ও বহুমূত্রে ব্যবহার্য।
থানকুনি Centella asiatica পাতার রস চোখের ছানি ও অন্যান্য চক্ষুরোগে এবং গোটাগাছ আমাশয়, বাহ্য ও অভ্যন্তরীণ আলসার ও খিঁচুনিতে ব্যবহার্য।
বাবচি Cullen corylifolia বীজের নির্যাস শ্বেতী, কুষ্ঠ ও প্রদাহী চর্মরোগে ব্যবহার্য।
কালো ধুতরা Datura metel মাদক, বেদনাহর,  প্রতিসংকোচক; পাতা হাঁপানি, শূল, কটিবাত,  যন্ত্রণাদায়ক টিউমার ও গ্রন্থিপ্রদাহে ব্যবহার্য।
আয়াপান Eupatorium triplinerve রক্তরোধক ও জীবণুনাশক; আলসার ও রক্তপাতে উপকারী; হূৎ-উত্তেজক, বমনকারক, ঘর্ম নিঃসারক ও জোলাপ হিসেবে ব্যবহার্য।
অনন্তমূল Hemidesmus indicus ঘর্ম নিঃসারক, মূত্রবর্ধক ও রক্তশোধক; ঔদারিক টিউমারে ব্যবহার্য।
কুরচি Holarrhena antidysenterica আমাশয়রোধী, কোষ্ঠবর্ধক, ক্ষুধাবর্ধক, কৃমিনাশক; ফল রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।
চালমুগরা Hydnocarpus kurzii বীজতৈল কুষ্ঠ ও অন্যান্য চর্মরোগে ব্যবহার্য।
মেহেদি Lawsonia inermis পাতা ও ছালের বাটা পোড়া  ও বাষ্পদাহে, খুশকি ও নানা চর্মরোগে ব্যবহার্য; জন্ডিসে উপকারী।
সর্পগন্ধা  Raulwolfia serpentina শিকড় উচ্চরক্তচাপ, অনিদ্রা, উদ্বেগ, উত্তেজনা ও উন্মত্ততা নিরাময়ে ব্যবহার্য।
অশোক Saraca asoca কড়া কোষ্ঠবর্ধক ও জরায়ু প্রশান্তিকর; রজঃস্রাব, অর্শ ও আলসার চিকিৎসায় ব্যবহার্য।
অর্জুন  Terminalia arjuna ছাল রক্তচাপ কমায়, হূৎ-টনিক, কোষ্ঠবর্ধক, লিভার সিরোসিসে টনিকের কাজ করে।
মেথি Trigonella foenum-graecum মূত্রবর্ধক, বায়ুরেচক, স্নিগ্ধকারক ও টনিক; রজঃস্রাবের গোলমাল, বহুমূত্র, উচ্চরক্তচাপ ও যৌনসমস্যা নিরাময়ে ব্যবহার্য।
অশ্বগন্ধা Withania somniferum শিকড় মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অনিদ্রা, হিক্কা, কাশি ও শোথে ব্যবহার্য।
আদা Zingiber officinale আদাকন্দ (rhizome) বায়ুরেচক, ক্ষুধাবর্ধক, হজমিকারক; অগ্নিমান্দ্য, বমন, স্বরভঙ্গ, কাশি,গলদাহ ও জ্বরে ব্যবহার্য।
[আবদুল গনি]

 
লোকজ ভেষজ জ্ঞান (Indigenous knowledge and herbal medicine) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসায় সনাতন স্বাস্থ্যসেবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রকার জ্ঞান ও বিচক্ষণতার মতো লোকপ্রজ্ঞাও মানুষের সরল শুদ্ধাশুদ্ধ পদ্ধতির প্রয়োগ থেকে জন্মে। সনাতন পদ্ধতিসমূহের মধ্যে লোকপ্রজ্ঞা রোগ শনাক্তকরণ ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রধান ভূমিকায় রয়েছে। দ্রুত পশ্চিমায়ন ও আধুনিক ঔষধপত্রের প্রচলনের ফলে অনেক অঞ্চলেই সংশ্লিষ্ট লোকপ্রজ্ঞাসহ সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে। বিশেষভাবে দ্রুত শিল্পায়িত এলাকাগুলিতে লোকপ্রজ্ঞা ও সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতি লোপ পেতে চলেছে। আয়ুর্বেদ, হেকিমি ও ইউনানি চিকিৎসার মতো সুলিখিত  ও সুনিবন্ধিত পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি তেমন বেশি নয়। কিন্তু অলিখিত পদ্ধতি বা লোকচিকিৎসা যা মুখে মুখে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত, সেগুলির বিপদ অত্যধিক। গ্রামাঞ্চলের কবিরাজি চিকিৎসা লোকপ্রজ্ঞাভিত্তিক চিকিৎসার একটি দৃষ্টান্ত যা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্যবহূত ও আদৃত হয়ে আসছে।
উত্তরবঙ্গের ১০টি গ্রামের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা গেছে রোগীদের ৩০ শতাংশ সনাতন চিকিৎসা গ্রহণ করে আর ১৫০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৫৭ জন লোকপ্রজ্ঞানির্ভর কবিরাজ। গোটা বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত ৫ হাজারের বেশি এ জাতীয় চিকিৎসক ছাড়াও ৩০০০ তালিকা-বহির্ভূত কবিরাজ রয়েছে।
বাংলাদেশে লোকপ্রজ্ঞাভিত্তিক লোকচিকিৎসার ধারা অনেক এবং সেগুলির উদ্ভব ও ব্যবহার নৃগোষ্ঠী সুনির্দিষ্ট এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের। উদাহরণ হিসেবে বয়স্ক গৃহিণী বা মহিলারা অসুখ, দৌর্বল্য ও গর্ভাবস্থার মতো বিশেষ ক্ষেত্রে লোকপ্রজ্ঞাভিত্তিক শিকড়-বাকড়ের ব্যবস্থা দেন। ভিষক, কবিরাজ বা বৈদ্যরা রোগবালাইয়ের জন্য লোকপ্রজ্ঞাভিত্তিক প্রতিষেধক যোগায়। বাংলাদেশে এদের সংখ্যা হাজার হাজার এবং বড় বড় গ্রামে গড়পড়তা ৪-৫ জন। গ্রামীণ পশু চিকিৎসকরা লোকপ্রজ্ঞা ও স্থানীয় গাছগাছড়ার সাহায্যে গৃহপালিত পশুদের চিকিৎসা করে। হাড় চিকিৎসকরা সনাতন লোকপ্রজ্ঞার সাহায্যে ভাঙা হাড় জোড়া লাগায়। ওঝারা  সাপ, কাঁকড়াবিছা ও কুকুর ইত্যাদির কামড়ের চিকিৎসা করে। চিরায়ত প্রসব-সহায়িকা দাই লোকপ্রজ্ঞার ভিত্তিতেই প্রসব করায়।

 
উদ্ভিজ্জ ভেষজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকপ্রজ্ঞা সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বাংলাদেশের সকল সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতির মূলভিত্তি। সুদূর অতীত থেকে বিকাশের ধারায় উদ্ভাবিত একটি নির্দিষ্ট নিরাময় পদ্ধতি ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ক্রমেই পরীক্ষিত, পরিশুদ্ধ, সংশোধিত ও বিকশিত হয়েছে আর চিকিৎসকদের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। লোকচিকিৎসার একটি বড় অংশ অবশ্য আজও বিভিন্ন বাস্ত্তসংস্থানিক অঞ্চলের সমাজে তাদের লোকপ্রজ্ঞার মতোই একান্ত স্থানীয় হয়ে যাচ্ছে। এ চিকিৎসা কালের গ্রাস এড়াতে পেরেছে এবং কেবল বংশপরম্পরায় স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক ঔষধপত্র আসার পর অধিকাংশ লোকজ ভেষজ উদ্ভিদ থেকে তৈরি ঔষধ বহুলাংশে বর্জন করেছে, ফলে লোকপ্রজ্ঞানির্ভর চিকিৎসাগুলি দ্রুত লোপ পাচ্ছে।  [এম ইকবাল জুবেরী]
আরও দেখুন উদ্ভিদজাত ভেষজ; ভেষজ উদ্ভিদ

 
বিপন্ন উদ্ভিদ (Threatened plants)  বিভিন্ন পর্যায়ের বিপন্ন অবস্থায় টিকে আছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিও-তে আহূত শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বের সকল জাতির প্রতিনিধিরা  জীববৈচিত্র্য কনভেনশন (Convention on Biological Diversity/CBD) নামের এক দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং তাতে গোটা মানবজাতির কল্যাণের জন্য নিজ নিজ দেশে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায়। বাংলাদেশও এ সনদের স্বাক্ষরদাতা।
 
সকল শিল্পোন্নত দেশ ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ ইতোমধ্যেই নিজ নিজ রাজনৈতিক ভৌগোলিক এলাকার বিপন্ন প্রজাতির সম্পূর্ণ তালিকা প্রস্ত্তত এবং নাম, শনাক্তির তথ্যাদি, চিত্র, দেশ ও দেশের বাইরে প্রজাতির বিস্তার, প্রাকৃতিক পরিবেশে বিপন্ন প্রজাতির অবস্থান, বিপন্নতার সুনির্দিষ্ট কারণ, সংরক্ষণের সর্বোত্তম উপায় ইত্যাকার সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সরবরাহ করেছে। এসব তথ্যের সংকলন লাল তথ্য বই (Red Data Book) নামে পরিচিত এবং এটি বিপন্ন প্রজাতিসমূহ সংরক্ষণের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 
জাতীয় সংরক্ষণ কৌশলের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক দলিলের একাংশ হিসেবে (১৯৯১) বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপন্ন ২৫ প্রজাতির দারু-উদ্ভিদের (vascular plants) একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের বিপন্ন সপুষ্পক উদ্ভিদের লাল বই প্রকাশের উদ্দেশ্যে  বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, দেশের অন্যূন ৯৫টি সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রজাতি নানা পর্যায়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ তালিকার তথ্যানুসারে অবিলম্বে ব্যাপক ও অর্থপূর্ণ সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। ১৯৭৫ সালে গৃহীত এবং বাংলাদেশসহ ১৪০টি দেশ কর্তৃক সমর্থিত বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কনভেনশন (Convention for International Trade in Endangered Species/CITES) অনেক জাতের গাছপালা ও জীবজন্তুর ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। CITES-এর তালিকাভুক্ত এবং বাংলাদেশের জন্য সবিশেষ উদ্বেগজনক এ ধরনের উদ্ভিদ হলো অর্কিড ও ঔষধি গাছপালা। কাঠ সংগ্রহের সময় অর্কিডের ব্যাপক ধ্বংসের দরুন নান্দনিক দিক থেকে মূল্যবান এ প্রজাতিগুলি অত্যন্ত দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে, আর যদৃচ্ছা সংগ্রহের জন্য লোপ পাচ্ছে ভেষজ গাছগাছালি।  [মোঃ সালার খান]
 
উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা  উদ্ভিদবিজ্ঞান জীববিজ্ঞানের একটি শাখা এবং উদ্ভিদের সবগুলি দিক, নিজেদের মধ্যে ও পরিবেশের সঙ্গে পারস্পরিক জটিল মিথষ্ক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা এ বিদ্যার আলোচ্য বিষয়। বাংলাদেশ একটি প্রাচীন কৃষিপ্রধান দেশ। বর্তমানে অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির দরুন মাথাপিছু জমির পরিমাণ অত্যধিক হ্রাস পেলেও এখনও কৃষিই কর্মসংস্থানের প্রধান খাত। উদ্ভিদবিজ্ঞান কৃষির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিধায় বহুকাল থেকেই জ্ঞানের এ শাখার প্রতি জীববিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা আকৃষ্ট হয়েছে। ফলে ভারত উপমহাদেশের যে অঞ্চল নিয়ে বর্তমান বাংলাদেশ গঠিত, উদ্ভিদবিজ্ঞান এখানেও জ্ঞানচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নির্দিষ্ট বিষয় হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞানের পাঠ গ্রহণের শুরু উচ্চ মাধ্যমিকের পর অর্থাৎ স্নাতক পর্যায়ে। এজন্য ৩ বছরের পাস কোর্স ও ৪ বছরের অনার্স কোর্সের পাঠক্রম রয়েছে। চার বছরের অনার্স কোর্স দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ১৩০০ ডিগ্রি কলেজের অধিকাংশেই উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক কোর্স এবং ২৪টি কলেজে স্নাতক অনার্স ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। দেশের সবগুলি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও উদ্ভিদবিজ্ঞান শিক্ষণের কর্মসূচি বিদ্যমান।
দেশের ৪টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ চালু আছে অনেক দিন থেকে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পর ১৯৩৯ সালে গঠিত জীববিজ্ঞান বিভাগের অধীনে উদ্ভিদবিজ্ঞানে শিক্ষাদান শুরু হয়। জীববিদ্যা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন উদ্ভিদবিদ পঞ্চানন মহেশ্বরী। ১৯৫৪ সালে জীববিজ্ঞান বিভাগ প্রাণিবিদ্যা ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে বিভক্ত হয়। অতঃপর ১৯৬৩ সালে  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৩ সালে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ চালু করে। এসব বিভাগ থেকে বি.এসসি অনার্স, এম.এসসি, এম.ফিল ও উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

 
অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণা মূলত সীমিত ছিল। অতঃপর সরকার কৃষিখাতে অনেকগুলি গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কৃষি ফসল সম্পর্কে গবেষণা পরিচালিত হওয়ায় উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণা প্রাধান্য লাভ করে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়াম, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ-এর উদ্ভিদবিজ্ঞান শাখা। এ সংস্থাগুলি কৃষির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক সংখ্যা আনুমানিক ২০০ আর কলেজ পর্যায়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের কোর্স শিক্ষাদানে রয়েছেন আরও প্রায় ২ হাজার শিক্ষক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বছরে প্রায় ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী উদ্ভিদবিজ্ঞানের ডিগ্রি লাভ করে।
 
গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এবং সমিতি   বাংলাদেশে উদ্ভিদবিজ্ঞান সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষা ও গবেষণার ইতিহাস এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট প্রাচীন।
 
সারণি ২ উদ্ভিদবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
 
ইনস্টিটিউট ও প্রতিষ্ঠাকাল  গবেষণাক্ষেত্র
বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ), ১৯৩৮  উদ্ভিদ প্রজনন, ফ্লোরাল বায়োলজি, কৃষিতত্ত্ব
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৯৭৬  কীটতত্ত্ব, উদ্যানবিদ্যা, উদ্ভিদ প্রজনন, কৃষি সম্প্রসারণ
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৯৫১  পাটের বংশাণুতত্ত্ব ও প্রজনন, ভ্যারাইটিগুলির মাঠপর্যায় মূল্যায়ন
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৯৫১  আখ প্রজনন, উন্নয়ন ও মূল্যায়ন
তুলা উন্নয়ন বোর্ড, ১৯৭২  তুলা প্রজনন, উন্নয়ন ও মূল্যায়ন
ফল গবেষণা স্টেশন, ১৯৬০  আম ও অন্যান্য আঞ্চলিক ফল প্রজনন
তামাক গবেষণা স্টেশন, ১৯০৬  তামাকের উৎপাদন ও মান উন্নয়ন
টিউবার ফসল গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৭   আলু গবেষণা, বীজ উৎপাদন
গম গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮০  গম প্রজনন, রোগ ব্যবস্থাপনা, বীজপ্রযুক্তি
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৯৫৭  প্রজনন, ক্লোন নির্বাচন, কৃষিতত্ত্ব, রোগবিদ্যা
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৯৫৫  প্রজনন, বৃক্ষ উন্নয়ন, শিল্পেব্যবহার্য কাঠ গবেষণা, ম্যানগ্রোভ গবেষণা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
আম গবেষণা স্টেশন, ১৯৮৯   আমের জাত উন্নয়ন, রোগ ও কীট নিয়ন্ত্রণ
ডাল গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৭  প্রজনন, জাত উন্নয়ন
উদ্যানবিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৯  প্রজনন, ফলের জাত উন্নয়ন
মশলা গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৯৫  মশলা গবেষণা ও উন্নয়ন
তেলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, ১৯৮৭  তেলবীজ গবেষণা ও উৎপাদন
বাংলাদেশ জাতীয় হা©র্বরিয়াম, ১৯৭০   বাংলাদেশের উদ্ভিদকুল
জীনতত্ত্ব বিভাগ, খাদ্য ও বিকিরণ জীববিদ্যা ইনস্টিটিউট পরমাণু শক্তি গবেষণা সংস্থা, ১৯৭৫   উদ্ভিদকোষকলা চাষ
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, ১৯৫৫ 
ঢাকা ল্যাবরেটরিস, ১৯৫৫  উদ্ভিজ্জ গবেষণা, উদ্ভিদ প্রজনন, শৈবাল চাষ
চট্টগ্রাম ল্যাবরেটরিস, ১৯৬৭  উদ্ভিজ্জ গবেষণা, উদ্ভিদ প্রজনন
রাজশাহী ল্যাবরেটরিস, ১৯৬৭  উদ্ভিজ্জ গবেষণা, উদ্ভিদ প্রজনন


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরপরই বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতি (১৯৭২), Bangladesh Association for Plant Tissue Culture (১৯৮৯) এবং Bangladesh Association for Plant Taxonomy (১৯৯২) গঠিত হয়। সবগুলি সমিতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেশ সক্রিয়।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]