ইউক্লিপটাস, শিশু, মেহগনি, রেইন ট্রি গাছগুলোকে রাস্তার পাশে
দাঁড়ানো অবস্থায় ভালোই লাগছিল। কিন্তু দ্বিজেনদা বললেন, গাছগুলো কেমন
বিসদৃশ লাগছে। এগুলো অত্যধিক পানি শোষণ করে জমি শুকিয়ে ফেলে। শিকড় গভীরে
প্রোথিত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আশপাশে অন্য গাছপালা জন্মাতে দেয় না। একটা
গাছ থেকে আরেকটি গাছের পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রাপ্তির জন্য দূরত্ব চাই।
চলার পথে হঠাৎ চোখে পড়ল শিমুল, শিরীষ, জারুল ও হিজল গাছ। গাছগুলো দেখিয়ে তিনি বললেন, আমাদের দেশে দরকার জলজ উদ্ভিদ। এখানে জলজ জায়গা বেশি। শিকড় গভীরে প্রোথিত হয়। ফলে পাশে অন্য কিছুও জন্মাতে পারে।
কুলাউড়া স্টেশনে নেমে বেবিট্যাক্সিতে করে বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রাম। পাশেই ৫ কিলোমিটার ভেতরে পাথারিয়ার পাহাড় আর মাধবকুণ্ডের ঝর্ণা। আসার পথে রাস্তার অনেক জায়গায় সুশোভিত গাছপালা দেখে অভিভূত হচ্ছিলাম, আর তিনি বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। এসব জায়গায় এমন সব গাছ লাগিয়েছে, যা জলবায়ু, পরিবেশ-পরিস্থিতির ঠিক অনুকূলে নয়। শিমুলিয়া, পাথারিয়ার বনাঞ্চল ও মাধবকুণ্ডে তার সঙ্গে থাকার ফলে প্রাণিবৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য বা ইকোলজি সম্পর্কে নতুন ধারণা পাই।
প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা বললেন, এসব ল্যান্ডস্কেপে সুপারি, জবা ফুল, সেগুন গাছ খাপ খায় না। পাহাড়ি প্রকৃতির নিজস্বতা আছে। তার বাইরে যদি এসব গাছ লাগানো হয় তাহলে তো প্রাকৃতিক হলো না। অথচ এই পাহাড়ি অঞ্চলে সেসব বৃক্ষ ও গাছপালা লাগানো হয়েছে, যেগুলো এখানকার সঙ্গে যায় না। দীর্ঘদিনের ভুল চর্চায় এমন হাল হয়েছে যে, বনায়নের কথা বলতে গেলে ইউক্যালিপটাস, মেহগনি জাতীয় একাশিয়া শ্রেণির গাছ লাগানোর কথাই মনে করা হয়। এ ধরনের প্রবণতা গড়ে ওঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে বিদেশ থেকে আনা অর্থ দিয়ে বনায়নের পরিকল্পনা।
আমাদের পাখিরা একাশিয়া, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি গাছগুলোতে বসে না। কারণ এসব গাছ তারা চেনে না। এগুলো বিদেশ থেকে আসা। বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রামের এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, এখানে আগে কত পাখি আসত_ ময়না, কাক। এখন এসব বসেই না। দ্বিজেন শর্মা এর উত্তরে বললেন, বিদেশি গাছে দেশি পাখিরা না বসার কারণ হচ্ছে তারা তো ওই গাছের গন্ধ চেনে না। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য রাখতে পারে না। গাছপালার বংশবৃদ্ধিতেও পাখির ভূমিকা বিঘি্নত হচ্ছে।
মেহগনি ও সেগুন, রেইন ট্রি শুধু কাঠই দেয়। মেহগনি যদিও চিরসবুজ, কিন্তু এটি বাড়ে ধীরগতিতে। অথচ রাস্তার ধারে দেশীয় পাঁচমিশালি ফলদ গাছ, যা থেকে প্রতি বছর ফল ও পরিণত বয়সে কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়_ আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ও অন্যান্য ফল চাষ করে আমরা ফল ও কাঠের চহিদা পূরণ করতে পারি। এ ছাড়া আছে জলপাই, চালতা, তেঁতুল, তাল, খেজুর, গাব, বেল, কুল প্রভৃতি ফলের গাছ; অর্জুন, নিম, আমলকী, হরীতকী প্রভৃতি ঔষধি গাছ। এগুলো আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী।
প্রধানমন্ত্রী ১৬-৩০ জুন ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও ১৬-১৮ জুন জাতীয় ফল প্রদর্শনী উপলক্ষে বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অনায়াসেই আমাদের উর্বর মাটিতে নানা রকম ফলের গাছ জন্মে। সারাবছর গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আঙিনা, রাস্তার ধারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও শহরাঞ্চলে বাসভবনের ছাদে যতটা সম্ভব ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা যেতে পারে। এদিকে কাঠের দাম বাড়ায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ দ্রুত বর্ধনশীলতার নামে বিদেশি জাতের ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, রেইনট্রি প্রভৃতি কাঠের গাছ লাগিয়ে গ্রামাঞ্চল বিপদাপন্ন করে ফেলছে, তাতে একদিন ক্ষতি আর আফসোসের শেষ থাকবে না। তাই সময় থাকতে খাদ্য ও পুষ্টির জোগানদার হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় ফলদ গাছ রোপণ করা জরুরি। এতে ফলের পাশাপাশি কাঠের জোগানটাও বাড়বে।
-------------------------------------------------------------
দেশের অনেক এলাকার সড়কে শিশুগাছের খবর সচিত্র প্রতিবেদন আকারে প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।
রেইনট্রি আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। মেহগনি যদিও চিরসবুজ, কিন্তু এটি বাড়ে ধীরগতিতে। রাস্তার ধারে লাগানো এসব কাঠের গাছ থেকে একসময় কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, তস্করবৃত্তির কারণে বাস্তবে তা আদৌ সম্ভব কি না, ভবিতব্যই জানে। অথচ রাস্তার ধারে দেশীয় পাঁচমিশালি ফলদ গাছ, যা থেকে প্রতিবছর ফল ও পরিণত বয়সে কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আম, জাম, কাঁঠাল, জলপাই, চালতা, তেঁতুল, তাল, খেজুর, গাব, বেল, কুল, লটকন, কাউ প্রভৃতি ফলের গাছের পাশাপাশি অর্জুন, নিম, আমলকী, হরীতকী, বহেড়া প্রভৃতি ঔষধি গাছ দৃষ্টিনন্দনও। কৃষ্ণচূড়া কদম, কাঠবাদাম প্রভৃতি গাছ লাগালে জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ সেগুলো খাদ্য ও পুষ্টির জোগান দিত।
এমনিতে কাঠের দাম বাড়ায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ দ্রুত বর্ধনশীলতার নামে বিদেশি জাতের ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, রেইনট্রি প্রভৃতি কাঠের গাছ লাগিয়ে গ্রামাঞ্চল বিপদাপন্ন করে ফেলছে, তাতে একদিন ক্ষতি আর আফসোসের শেষ থাকবে না।
তাই সময় থাকতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টিকে মাথায় রেখে খাদ্য ও পুষ্টির জোগানদার হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় ফলদ গাছ রোপণ করতে হবে। কাঠের কথা চিন্তায় থাকবে, পাশাপাশি কাঠ ও ফল উভয়ের কথা চিন্তা করতে হবে। বিদেশি ফল ও কাঠনির্ভর হওয়া মানে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাওয়া।
তাই গাছ লাগাতে শতকরা ৫০ ভাগ দেশীয় ফলের গাছ, ১০ ভাগ ঔষধি গাছ, ১০ ভাগ অন্যান্য গাছ এবং ৩০ ভাগ কাঠের গাছ লাগানো উচিত। আবহমান বাংলার বিচিত্র ফলফলারি আর জীববৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশীয় ফলের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দিতে আমরা কি একটু হিসাব করে গাছ লাগাতে পারি না?
--------------------------------------------------------
চলার পথে হঠাৎ চোখে পড়ল শিমুল, শিরীষ, জারুল ও হিজল গাছ। গাছগুলো দেখিয়ে তিনি বললেন, আমাদের দেশে দরকার জলজ উদ্ভিদ। এখানে জলজ জায়গা বেশি। শিকড় গভীরে প্রোথিত হয়। ফলে পাশে অন্য কিছুও জন্মাতে পারে।
কুলাউড়া স্টেশনে নেমে বেবিট্যাক্সিতে করে বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রাম। পাশেই ৫ কিলোমিটার ভেতরে পাথারিয়ার পাহাড় আর মাধবকুণ্ডের ঝর্ণা। আসার পথে রাস্তার অনেক জায়গায় সুশোভিত গাছপালা দেখে অভিভূত হচ্ছিলাম, আর তিনি বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন। এসব জায়গায় এমন সব গাছ লাগিয়েছে, যা জলবায়ু, পরিবেশ-পরিস্থিতির ঠিক অনুকূলে নয়। শিমুলিয়া, পাথারিয়ার বনাঞ্চল ও মাধবকুণ্ডে তার সঙ্গে থাকার ফলে প্রাণিবৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য বা ইকোলজি সম্পর্কে নতুন ধারণা পাই।
প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা বললেন, এসব ল্যান্ডস্কেপে সুপারি, জবা ফুল, সেগুন গাছ খাপ খায় না। পাহাড়ি প্রকৃতির নিজস্বতা আছে। তার বাইরে যদি এসব গাছ লাগানো হয় তাহলে তো প্রাকৃতিক হলো না। অথচ এই পাহাড়ি অঞ্চলে সেসব বৃক্ষ ও গাছপালা লাগানো হয়েছে, যেগুলো এখানকার সঙ্গে যায় না। দীর্ঘদিনের ভুল চর্চায় এমন হাল হয়েছে যে, বনায়নের কথা বলতে গেলে ইউক্যালিপটাস, মেহগনি জাতীয় একাশিয়া শ্রেণির গাছ লাগানোর কথাই মনে করা হয়। এ ধরনের প্রবণতা গড়ে ওঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে বিদেশ থেকে আনা অর্থ দিয়ে বনায়নের পরিকল্পনা।
আমাদের পাখিরা একাশিয়া, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি গাছগুলোতে বসে না। কারণ এসব গাছ তারা চেনে না। এগুলো বিদেশ থেকে আসা। বড়লেখার শিমুলিয়া গ্রামের এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, এখানে আগে কত পাখি আসত_ ময়না, কাক। এখন এসব বসেই না। দ্বিজেন শর্মা এর উত্তরে বললেন, বিদেশি গাছে দেশি পাখিরা না বসার কারণ হচ্ছে তারা তো ওই গাছের গন্ধ চেনে না। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য রাখতে পারে না। গাছপালার বংশবৃদ্ধিতেও পাখির ভূমিকা বিঘি্নত হচ্ছে।
মেহগনি ও সেগুন, রেইন ট্রি শুধু কাঠই দেয়। মেহগনি যদিও চিরসবুজ, কিন্তু এটি বাড়ে ধীরগতিতে। অথচ রাস্তার ধারে দেশীয় পাঁচমিশালি ফলদ গাছ, যা থেকে প্রতি বছর ফল ও পরিণত বয়সে কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়_ আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ও অন্যান্য ফল চাষ করে আমরা ফল ও কাঠের চহিদা পূরণ করতে পারি। এ ছাড়া আছে জলপাই, চালতা, তেঁতুল, তাল, খেজুর, গাব, বেল, কুল প্রভৃতি ফলের গাছ; অর্জুন, নিম, আমলকী, হরীতকী প্রভৃতি ঔষধি গাছ। এগুলো আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী।
প্রধানমন্ত্রী ১৬-৩০ জুন ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও ১৬-১৮ জুন জাতীয় ফল প্রদর্শনী উপলক্ষে বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অনায়াসেই আমাদের উর্বর মাটিতে নানা রকম ফলের গাছ জন্মে। সারাবছর গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আঙিনা, রাস্তার ধারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও শহরাঞ্চলে বাসভবনের ছাদে যতটা সম্ভব ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা যেতে পারে। এদিকে কাঠের দাম বাড়ায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ দ্রুত বর্ধনশীলতার নামে বিদেশি জাতের ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, রেইনট্রি প্রভৃতি কাঠের গাছ লাগিয়ে গ্রামাঞ্চল বিপদাপন্ন করে ফেলছে, তাতে একদিন ক্ষতি আর আফসোসের শেষ থাকবে না। তাই সময় থাকতে খাদ্য ও পুষ্টির জোগানদার হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় ফলদ গাছ রোপণ করা জরুরি। এতে ফলের পাশাপাশি কাঠের জোগানটাও বাড়বে।
-------------------------------------------------------------
দেশের অনেক এলাকার সড়কে শিশুগাছের খবর সচিত্র প্রতিবেদন আকারে প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।
রেইনট্রি আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর। মেহগনি যদিও চিরসবুজ, কিন্তু এটি বাড়ে ধীরগতিতে। রাস্তার ধারে লাগানো এসব কাঠের গাছ থেকে একসময় কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, তস্করবৃত্তির কারণে বাস্তবে তা আদৌ সম্ভব কি না, ভবিতব্যই জানে। অথচ রাস্তার ধারে দেশীয় পাঁচমিশালি ফলদ গাছ, যা থেকে প্রতিবছর ফল ও পরিণত বয়সে কাঠ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আম, জাম, কাঁঠাল, জলপাই, চালতা, তেঁতুল, তাল, খেজুর, গাব, বেল, কুল, লটকন, কাউ প্রভৃতি ফলের গাছের পাশাপাশি অর্জুন, নিম, আমলকী, হরীতকী, বহেড়া প্রভৃতি ঔষধি গাছ দৃষ্টিনন্দনও। কৃষ্ণচূড়া কদম, কাঠবাদাম প্রভৃতি গাছ লাগালে জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ সেগুলো খাদ্য ও পুষ্টির জোগান দিত।
এমনিতে কাঠের দাম বাড়ায় দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ দ্রুত বর্ধনশীলতার নামে বিদেশি জাতের ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, রেইনট্রি প্রভৃতি কাঠের গাছ লাগিয়ে গ্রামাঞ্চল বিপদাপন্ন করে ফেলছে, তাতে একদিন ক্ষতি আর আফসোসের শেষ থাকবে না।
তাই সময় থাকতে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টিকে মাথায় রেখে খাদ্য ও পুষ্টির জোগানদার হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় ফলদ গাছ রোপণ করতে হবে। কাঠের কথা চিন্তায় থাকবে, পাশাপাশি কাঠ ও ফল উভয়ের কথা চিন্তা করতে হবে। বিদেশি ফল ও কাঠনির্ভর হওয়া মানে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাওয়া।
তাই গাছ লাগাতে শতকরা ৫০ ভাগ দেশীয় ফলের গাছ, ১০ ভাগ ঔষধি গাছ, ১০ ভাগ অন্যান্য গাছ এবং ৩০ ভাগ কাঠের গাছ লাগানো উচিত। আবহমান বাংলার বিচিত্র ফলফলারি আর জীববৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশীয় ফলের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দিতে আমরা কি একটু হিসাব করে গাছ লাগাতে পারি না?
--------------------------------------------------------
বিদেশ থেকে আনা আকাশি, ম্যানজিয়াম, রাবার, ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন
প্রজাতির আগ্রাসী গাছ-গাছালি আমাদের জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
স্থানীয় প্রজাতির গাছ, কৃষি উত্পাদন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সিলেট অঞ্চলের
সংরক্ষিত বনাঞ্চল, রাস্তার ধারে এসব বিদেশি গাছের বাগান এখন ব্যাপকভাবে
দৃশ্যমান। সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে আগ্রাসী প্রজাতির এসব গাছ
রোপণ করা হচ্ছে। বন বিভাগও পিছিয়ে নেই। দ্রুত বর্ধনশীল এসব প্রজাতির গাছ
দিয়ে তারাও বনায়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় মুনাফা
ঘরে তোলা যায় তাড়াতাড়ি। মূলত এ কারণেই গত কয়েক যুগ ধরে এসব গাছ লাগানোর
হিড়িক পড়ে গেছে। দেশি প্রজাতির মূল্যবান কাঠ, ফল ও ঔষধি গাছ লাগানোর
বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে।
প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা পত্রিকায়
প্রকাশিত তাঁর এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘ইউক্যালিপটাস, শিশু, মেহগনি,
রেইনট্রি— এই গাছগুলো অত্যধিক পানি শোষণ করে। জমি শুকিয়ে যায়। শিকড় গভীরে
প্রোথিত না হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আশেপাশে অন্য গাছপালা হয় না।’ তিনি আরো
বলেন, ‘আমাদের দেশে দরকার জলজ উদ্ভিদ। এখানে জলজ জায়গা বেশি। শিকড় গভীরে
প্রোথিত হয়। ফলে পাশে অন্য গাছ-গাছালি জন্মাতে পারে।’
রাস্তার পাশে লাগানো বিদেশি গাছের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কৃষির উপর। সরাসরি
ক্ষতিগ্রস্ত কমলগঞ্জের কৃষক তোয়াবুর রহমান, ফটিকুল ইসলাম, আকতার মিয়া ও
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কমলগঞ্জের সফল কৃষক মোবাশ্বির আলীসহ স্থানীয় সচেতন
কৃষকরা বলেন, আকাশী, ম্যানজিয়াম গাছ কৃষি জমি নষ্ট করছে। মাছের জন্যও এগুলো
ক্ষতিকর। গাছের ছায়া ধানের জমির বেশ কিছু জায়গা দখল করে রাখে। ছায়ায় হওয়া
এই ধান গাছ পাতা মোড়ানো রোগসহ বিভিন্ন ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। এসব ধান পরে
গরু মহিষকে খাওয়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আকাশী গাছের ছায়ায় কোনো সবজিও
হয় না। এসব গাছের কারণে মাছের চাষও ব্যাহত হচ্ছে। এ ধরনের নানা নেতিবাচক
প্রভাব থাকার পরও আনাচে-কানাচে সড়কপথ ও রেলপথের পাশে এসব গাছ দিয়ে সামাজিক
বনায়নের হিড়িক শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বনবিভাগের উদ্যোগে
শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়ক থেকে পতনঊষার সড়কেও পুরনো বাগান কেটে নতুন করে আবারও
আকাশী গাছের বনায়ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমলগঞ্জের
রাজকান্দি বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রায় বলেন, দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায়
উপকারভোগীরা বিদেশি প্রজাতির গাছ দিয়ে সামাজিক বনায়ন করতে আগ্রহী। দেশীয়
প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ বড় হতে অনেক সময় লাগে। তারপরও মাঝে মধ্যে
দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো হচ্ছে। মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণি বিভাগের নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আগ্রাসী প্রজাতির গাছগাছালি,
পশু-পাখির খাবার তৈরি করে না এবং দ্রুত বিস্তারের সময় অন্য গাছের সালোক
সংশ্লেষণ-প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। যে কারণে জীববৈচিত্র্যের জন্য গাছগুলো খুবই
ক্ষতিকর।
---------------------------------
No comments:
Post a Comment