Sunday, September 15, 2019

কোথায় কোন গাছ ..................................................



চিরসবুজের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। নগরায়ণ জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে এদেশে বনভূমির পরিমান অশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল মানুষ গাছ লাগানো বৃথা মনে করত। কিন্তু সমাজে সচেতনতা বেড়েছে, মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে গাছ বিপদের বন্ধু। তাই বেড়েছে সামাজিক ভূমির পরিমাণ। মে, জুন, জুলাই আগস্ট মাস গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। নির্ভরযোগ্য সরকারী-বেসরকারী নার্সারি বা স্থানীয় হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সুস্থ, সবল রোগমুক্ত চারা সংগ্রহ করতেহবে। বর্তমানে বিদেশী প্রজাতির গাছের প্রতি মানুষের উংসাহ বেশী দেখা যায়। এতে দ্রুত নগদ টাকার সংস্থান হলেও ভবিষ্যতের জন্য তা মোটেও ভাল নয়। পরিবেশ এবং মাটির উপর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইউক্যালিপটাস গাছ ক্রয়-বিক্রয় রোপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আবার শুধু বনজ গাছ না লাগিয়ে ফলজ, বনজ ঔষধি গাছ মিলিয়ে লাগানোই ভাল। এতে যেমন অর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত হয় তেমনি পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চিকিংসা ব্যয় কমে যায়। কোন গাছ কোথায় লাগাতে হবে ব্যপারে বিজ্ঞান ভিত্তিক কোন ধারণা না থাকায় গাছগাছালি থেকে আমরা পূর্ণ সুবিধা নিতে পারছি না।
গাছ লাগানোর আগে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা জরুরী। পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এবং উর্বর জায়গা নির্বাচন করা উত্তম। লক্ষ্য রাখতে হবে বেলে মাটিতে গাছ ভাল জন্মে না। তাই বেলে মাটিতে গাছ লাগাতে চাইলে বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন।
বসতবাড়ির দক্ষিণেঃ- দক্ষিণ পাশে বড় আকারের গাছ লাগালে বাড়িতে সূর্যের আলো বাতাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বাড়ি হয় অন্ধকারোচ্ছন্ন স্যাঁতসেতে। তাই বাড়ির দক্ষিণে ছোট আকারের কম ঝোপ ঝাড় বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। যেমন- সুপারি, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম, মেহেদী প্রভৃতি।
বাড়ির উত্তর পাশেঃ- বাড়ির উত্তরে বড় গাছপালা থাকলে ঝড়ো বাতাস থেকে বাড়িকে রক্ষা করে। তাই বড় এবং শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ উত্তরে লাগানো উচিৎ। যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম, মেহগনি, শিশু, সেগুন, আকাশমনি, বাঁশ, তেঁতুল, পিতরাজ ইত্যাদি।
বাড়ির পূর্ব-পশ্চিম পাশেঃ- মাঝারি আকারের মধ্যম ঝোপালো গাছ লাগানো ভাল। এতে বাড়ির সৌন্দর্য্য বাড়ে এবং আলো বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। পূর্ব-পশ্চিমে লাগানোর উপযুক্ত গাছ হল কুল, সফেদা, আম, লিচু, খেজুর, ডালিম, কলা, আতা, বেল, শরিফা, গাব, কামরাঙ্গা, পেয়ারা ইত্যাদি।
রাস্তার পাশেঃ- রাস্তা দুই পাশে উঁচু শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছ লাগানো ভাল। রাস্তার ধারে যেসব গাছ লাগানো হয় সাধারণত মাঝে মাঝে ডালপালা ছাটাই করা হয়। তাই ছাটাই সহ্য করতে পারে এমন গাছই নির্বাচন করতে হবে। যেমন-মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, তাল, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা, ইপিল ইপিল, শিমুল, মান্দার, রেইনট্রি, রাজকড়ই, শিলকড়ই, শিরীষ, অর্জুন, সোনালু ইত্যাদি। গ্রামের কাঁচা রাস্তা দু পাশে লাগানো যেতে পারে শিশু, নিম, দেবদারু, চম্পা, ইপিল ইপিল, খেজুর, তাল প্রভৃতি গাছ।
পতিত জমিতেঃ- সব ধরনের গাছ লাগানো যেতে পারে। যেমন- আম, কাঁঠাল, জাম, কামরাঙ্গা, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, ঝাউ, কৃষ্ণচূড়া, বাঁশ ইত্যাদি।
হাট-বাজারেঃ- ছায়দানকারী গাছ রোপণ করা উচিত। আম, কাঁঠাল, জাম, সেগুন, দেবদারু, সুপারি, খেজুর, নিম, পাম, কৃষ্ণচূড়া, বট, পাকুড় প্রভৃতি গাছ রোপণ করা উচিত।
রেল লাইনের দুই পাশেঃ- পিতরাজ, মেহগনি, শিশু, সেগুন, হরিতকি, আকাশমণি, দেবদারু, নারিকেল, সুপারি, খেজুর, নিম, বাবলা, ইপিল-ইপিল, শিমুল, খেজুর, সুপারি, নারিকেল গাছ লাগানো যেতে পারে।
বাঁধের ধারেঃ- বাঁধের ধারে সাধারণত গাছ লাগানো হয় বাঁধ মজবুত এবং দৃষ্টি নন্দন করতে। তাই যে সব গাছের শিকড় বিস্তৃত এবং দেখতে সুন্দর সেসব গাছ লাগানোই ভাল। বট, পাকুড়, অশ্বথ, আকাশমনি, দেবদারু, মেহগনি, শিশু, নাকিকেল, বিভিন্ন প্রজাতির পাম, খেজুর ইত্যাদি গাছ বাঁধের ধারে লাগাোর উপযোগী।
পুকুড় পাড়েঃ- পুকুর পাড়ে খুব বড় গাছ না লাগানো ভাল। কারণ বড় গাছ সূর্যের আলোর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। গাছের পচপ পাতা পানি নষ্ট করে। সুপারি, তাল, নারিকেল, নিম, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, ডালিম ইত্যাদি গাছ পুকুর পাড়ে লাগানোর উপযুক্ত গাছ।
জমির চার পাশেঃ- যেসব গাছের ডালপালা শিকড় কম ছড়ায় জমির আইলে সে ধরণের গাছ লাগাতে হয়। মেহগনি, বাবলা, তাল, খেজুর, সুপারি, জিগা, কড়্ই, আকাশমণি, দেবদারু ইত্যাদি গাছ জমির আইলে ভাল হয়। বর্তমানে একই জমিতে্ ফসলের পাসাপাশি বিভিন্ন ধরণের ফলের গাছ লাগান হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুকিও কমছে।
নিচু জমিতেঃ- সাধারণত পানির উপস্থিতি সহ্য করতে পারে নিচু জমিতে এমন গাছ লাগানো উচিৎ। যেমন- বেত, মূর্তা, বাঁশ, মান্দার, জারুল, হিজল, কদম ইত্যাদি।
নদীর ধারেঃ- বড়, পানি সহিষ্ণু, গভীর শিকড় বিশিষ্ট গাছ নদীর ধারে লাগানো ভাল। যেমন- শিমুল, ছাতিম, পিটালি, বেত, বাঁশ, মূর্তা, মান্দার, জারুল, হিজল, কদম, বাবলা, মেহগনি ইত্যাদি।
বিলেঃ- বিলে বছরে প্রায় চার মাস পানি থাকে। তাই যেসব গাছ পানিতে বেচে থাকতে পারে বিলে সেসব গাছ লাগাতে হবে। যেমন- হিজল, করচ, বিয়াস, পিটালী, জারুল, মান্দার, বরুণ, পলাশ, কদম, চালতা, পুতিজাম, ঢেপাজাম, পিতরাজ, অর্জুন ইত্যাদি।
চরে লাগানোর গাছঃ- উপকূলীয় চরে কেওড়া, বাইন, কাঁকড়া, গরান, গোলপাতা গাছ লাগানো যায়। যেসব উপকূলীয় চরে পানি ওঠে না সেখানে বাবলা, ঝাউ, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, জারুল, রেইনট্রি ইত্যাদি লাগানো যায়। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে ঝাউ, লোনাঝাউ, পিটালী, করচ, পানিবিয়াস লাগানোর উপযোগী।
উপকূলীয় অঞ্চলেঃ- লবণাক্ততা সহিষ্ণু গাছ যেমন- সুন্দরী, ছৈলা, গরান, গেওয়া, গোলপাতা, মান্দার, কড়াই, বাবলা, নারিকেল ইত্যাদি গাছ রোপণ করা উচিত।
পাহাড়ঃ- পাহাড়ি জমিতে কমলালেবুসহ বিভিন্ন প্রজাতির লেবু, লিচু, পেয়ারা, গোল মরিচ, আদা, আনারসের বাগান গড়ে উঠছে। এছাড়াও তেলসুর, চাপালিশ, চিকরাশি, শিলকড়াই, গর্জন, গামার, সেগুন, ইপিল-ইপিল, বাঁশ, কাজুবাদাম, বেত প্রভৃতি গাছ লাগানো যায়।

No comments:

Post a Comment