'পাখি পাকা পেঁপে খায়'- এই বাক্য শৈশবে আমরা কে না আওড়েছি! একদিন বাংলায়
এমন হাজারো পঙ্ক্তি-প্রবাদ ভরে ছিল ফলের গন্ধ-মাখামাখিতে। কারণ বাংলার ঘরে
ঘরে, গ্রামে-শহরে ফল ছিল সহজাত। এখন মানুষই পায় না পাকা পেঁপে, আর পাখি তো
পরের ব্যাপার। আর্থিক বিবেচনার বশে কেবল কাঠ গাছ রোপণের এক মহামারীতে পরিণত
হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশ। যেখানেই যাবেন সেখানেই কাঠ গাছের ভ্রান্ত জয়জয়কার।
সেই সঙ্গে সামাজিক বনায়নের নামে মাইলের পর মাইল রাস্তা ও সরকারি জমিতে কেবল
কাঠ গাছের সারি। সেখানে পাখিরা আসে না। তাতে কি মানুষের সত্যি উপকার? তাতে
কি দেশ সত্যিই অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে লাভবান? উত্তর- না।
সমস্যাটা কি শুধুই অর্থনৈতিক? না। সমস্যা আমাদের ক্রমে বদলে যাওয়া জাতীয় মানসিকতার, অভ্যাসের, দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলার পলি মাটিতে সত্যিই সোনা ফলে, শুধু ফলানোর মানসিকতা দরকার। সেই অদম্য ইচ্ছা ও স্বপ্নকে বুকে নিয়ে একটি সংগঠন সারাদেশে কাজ শুরু করেছে। 'ফলদ বাংলাদেশ' নামের এ সংগঠনটি গত চার বছর ধরে সারাদেশে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও এ সংক্রান্ত সচেতনতায় কাজ করছে। 'ফলদ বাংলাদেশ'-এর পরিকল্পনা হলো সারাদেশে অন্তত পাঁচ কোটি ফলের গাছ লাগানো। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে দেশে বহু সংগঠন, ব্যক্তি এবং সরকারি উদ্যোগে প্রচুর বৃক্ষরোপণের পরও তারা কেন বৃক্ষরোপণের কথা ভাবছে? কারণ দেশে বছরের পর বছর ধরে ভুল বনায়নের মাধ্যমে আমাদের জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খলা, পুষ্টি ও ভিটামিনের নিশ্চিত উৎসগুলো নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু কাঠনির্ভর বৃক্ষরোপণ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। তাই দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিটি বাড়িতে তারা সবাই মিলে ফলদ গাছ রোপণ করতে চায়। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ মাত্র একটি উদ্যোগের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই প্রতিটি মানুষ, পরিবার, সংঘ, সংস্থার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু শুরুতেই তো আর প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা যায় না। তাই শুরু থেকেই সংগঠনটি ধীরে ধীরে তাদের কর্মী সংগ্রহ এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফল গাছ লাগানোর কাজ করছে। এ বর্ষায়ও তারা থেমে নেই। কর্মীদের ব্যক্তিগত এবং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অর্থ ও চারা সহায়তায় যার যা সাধ্যমতো সংগঠনটি বিভিন্ন জেলায় বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পূর্বপরিকল্পিত গ্রামগুলোতে ফল গাছ রোপণের জন্য কাজ করছে। বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
এখন আসা যাক মূল কথায়। কেন বাংলাদেশের জন্য জাতীয় বৃক্ষরোপণে এ মুহূর্ত থেকে কাঠ গাছকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত হওয়া জরুরি? মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, রেইন-ট্রি, একাশিয়াই এখন আমাদের দেশের ৭০ ভাগ বৃক্ষ। কিন্তু এ গাছগুলোর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি এসব গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য উল্টো ক্ষতিকারক। অথচ দেশীয় ফল বৃক্ষগুলো হাত ভরে দেয় আমাদের। যদি আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের কথাই ধরি, এর সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য- কাঠ অতি উন্নতমানের, পাতা পশুখাদ্য, ফল উপাদেয় পুষ্টিকর খাবার। তবু লাভজনক বিবেচনায় আমরা বাড়িতে-সড়কে রোপণ করছি মেহগনি। বাস্তবে দেখা গেছে যে কোনো হিসাবে ২০ বছরে একটি মেহগনি গাছ থেকে যদি ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়, কাঁঠাল থেকে আসবে নূ্যনতম ৬০ হাজার টাকা। আর গাছ তো শুধু টাকা নয়, কাঠ নয়; গাছ একটি প্রাণ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। ফলদ বৃক্ষের সঙ্গেই সেই সম্পর্ক হয়ে ওঠে মধুময়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ফলের দাওয়াত দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ, যা এখন বিস্মৃতপ্রায়।
তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা ফলদ বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টির বার্ষিক ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারি সহজেই। উর্বর মাটি ও উপযোগী জলবায়ু থাকা সত্ত্বেও প্রচুর ফল আমদানির কারণে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ এই কোটি কোটি টাকার বাজার সহজেই দেশীয় সুস্বাদু ফলের হতে পারে। যা অনায়াসে আমাদের পুষ্টি ঘাটতি, রসনা তৃপ্তি, আর্থিক দৈন্য ঘুচাতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আম, লিচু, জাম, সফেদা, কাঁঠাল, গাব, তাল, তেঁতুল, জলপাই ছাড়াও বিভিন্ন ফল এবং ঔষধি গাছ হবে উন্নতমানের কাঠেরও উৎস।
আমাদের দেশে প্রচলিত যে কোনো কাঠ গাছের তুলনায় ফলের গাছে অন্তত তিন গুণ বেশি লাভ। পরিবেশের জন্যও উপকারী। আর স্থানীয়ভাবে ফলের পর্যাপ্ত জোগানই পারে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত অভিশাপ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
আরেকটি মজার কিন্তু হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো, অধিকাংশ কাঠের গাছে পাখির কোনো খাদ্য নেই। পাখির বাসা বাঁধা এবং ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নেওয়ার মতো উপযোগী ডালপালা নেই। তাই আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে দেশীয় পাখি, যা আমাদের ফসল উৎপাদনে ফেলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মানুষ বন উজাড় করে যতটা না পাখি তাড়িয়েছে- খাদ্যাভাবে, ফল না পাওয়ায় তারা নিজেরাই এ তল্লাটে আনাগোনা কমিয়ে দিয়েছে তার চেয়ে বহু গুণ।
দেশের ৪৭ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পর্যাপ্ত ফল উৎপাদনের মাধ্যমে যার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। কাজেই দেশ এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়ে শুধু কাঠের গাছের বদলে ব্যাপক হারে ফলদ বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন, যা এখন আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তাই কয়েকজন তরুণ মিলে গড়ে তোলা 'ফলদ বাংলাদেশ' সংগঠনটির আহ্বান- 'ফল গাছ লাগান, দেশ বাঁচান'। তাদের আহ্বান- আসুন, সবাই মিলে করি 'ফলদ বাংলাদেশ' আন্দোলন। আসুন প্রতি বর্ষায় নিজের ও আশপাশের বাড়ির আঙিনায় ফলের চারা রোপণ করি। হ
কেন ফলবৃক্ষ রোপণ
- দেশের পুষ্টি ঘাটতি কমানো।
- ফলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
- স্থানীয়ভাবে ফলের জোগান বৃদ্ধি করে ফলে বিষ বা ফরমালিন প্রয়োগ বন্ধ করা।
- পাখিদের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- বৃক্ষকে শুধু কাঠ আর টাকা হিসেবে দেখার প্রবণতা ও কুফল হ্রাস করা।
- ফলবৃক্ষ মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে, আত্মীয়-বন্ধুদের ফলের নিমন্ত্রণ দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা।
- নিঃস্বার্থভাবে অপরের মঙ্গল কামনার অভ্যাস তৈরি করা।
- বিদেশি ক্ষতিকর বৃক্ষের বদলে আমাদের উর্বর মাটিতে উপযোগী বৃক্ষকে প্রাধান্য দেওয়া।
- ফলদ বৃক্ষের বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
- বিষমুক্ত বিশুদ্ধ পুষ্টি লাভের স্বাধীন ক্ষেত্র তৈরি করা।
পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন
- ইউক্যালিপটাস। কারণ অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী, নিম্নমানের কাঠ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
- রেইন-ট্রি। কারণ এই আগ্রাসী গাছ অন্য গাছকে বাড়তে দেয় না, ঝরা পাতা ফসল ও মাছের জন্য ক্ষতিকর, কাঠও নিম্নমানের।
- মেহগনি। এর ফল বিষাক্ত। পুকুরের পানিতে পড়লে মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অত্যধিক রোপিত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই।
- শিশু। কারণ এর কাঠ মাঝারি মানের, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।
- একাশিয়া। কারণ এর মাইক্রোস্কোপিক রেণু অ্যালার্জি/অ্যাজমার অনুঘটক, কাঠ মাঝারি মানের, গঠন আঁকাবাঁকা, বাংলাদেশে অতিরিক্ত রোপিত।
সমস্যাটা কি শুধুই অর্থনৈতিক? না। সমস্যা আমাদের ক্রমে বদলে যাওয়া জাতীয় মানসিকতার, অভ্যাসের, দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলার পলি মাটিতে সত্যিই সোনা ফলে, শুধু ফলানোর মানসিকতা দরকার। সেই অদম্য ইচ্ছা ও স্বপ্নকে বুকে নিয়ে একটি সংগঠন সারাদেশে কাজ শুরু করেছে। 'ফলদ বাংলাদেশ' নামের এ সংগঠনটি গত চার বছর ধরে সারাদেশে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও এ সংক্রান্ত সচেতনতায় কাজ করছে। 'ফলদ বাংলাদেশ'-এর পরিকল্পনা হলো সারাদেশে অন্তত পাঁচ কোটি ফলের গাছ লাগানো। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে দেশে বহু সংগঠন, ব্যক্তি এবং সরকারি উদ্যোগে প্রচুর বৃক্ষরোপণের পরও তারা কেন বৃক্ষরোপণের কথা ভাবছে? কারণ দেশে বছরের পর বছর ধরে ভুল বনায়নের মাধ্যমে আমাদের জীববৈচিত্র্য, খাদ্যশৃঙ্খলা, পুষ্টি ও ভিটামিনের নিশ্চিত উৎসগুলো নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু কাঠনির্ভর বৃক্ষরোপণ আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। তাই দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিটি বাড়িতে তারা সবাই মিলে ফলদ গাছ রোপণ করতে চায়। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ মাত্র একটি উদ্যোগের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই প্রতিটি মানুষ, পরিবার, সংঘ, সংস্থার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু শুরুতেই তো আর প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত কর্মী বাহিনী তৈরি করা যায় না। তাই শুরু থেকেই সংগঠনটি ধীরে ধীরে তাদের কর্মী সংগ্রহ এবং গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফল গাছ লাগানোর কাজ করছে। এ বর্ষায়ও তারা থেমে নেই। কর্মীদের ব্যক্তিগত এবং স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত অর্থ ও চারা সহায়তায় যার যা সাধ্যমতো সংগঠনটি বিভিন্ন জেলায় বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পূর্বপরিকল্পিত গ্রামগুলোতে ফল গাছ রোপণের জন্য কাজ করছে। বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
এখন আসা যাক মূল কথায়। কেন বাংলাদেশের জন্য জাতীয় বৃক্ষরোপণে এ মুহূর্ত থেকে কাঠ গাছকে প্রাধান্য দেওয়া থেকে বিরত হওয়া জরুরি? মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, শিশু, রেইন-ট্রি, একাশিয়াই এখন আমাদের দেশের ৭০ ভাগ বৃক্ষ। কিন্তু এ গাছগুলোর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি এসব গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য উল্টো ক্ষতিকারক। অথচ দেশীয় ফল বৃক্ষগুলো হাত ভরে দেয় আমাদের। যদি আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠালের কথাই ধরি, এর সবকিছুই ব্যবহারযোগ্য- কাঠ অতি উন্নতমানের, পাতা পশুখাদ্য, ফল উপাদেয় পুষ্টিকর খাবার। তবু লাভজনক বিবেচনায় আমরা বাড়িতে-সড়কে রোপণ করছি মেহগনি। বাস্তবে দেখা গেছে যে কোনো হিসাবে ২০ বছরে একটি মেহগনি গাছ থেকে যদি ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়, কাঁঠাল থেকে আসবে নূ্যনতম ৬০ হাজার টাকা। আর গাছ তো শুধু টাকা নয়, কাঠ নয়; গাছ একটি প্রাণ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক। ফলদ বৃক্ষের সঙ্গেই সেই সম্পর্ক হয়ে ওঠে মধুময়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের ফলের দাওয়াত দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ, যা এখন বিস্মৃতপ্রায়।
তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা ফলদ বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টির বার্ষিক ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারি সহজেই। উর্বর মাটি ও উপযোগী জলবায়ু থাকা সত্ত্বেও প্রচুর ফল আমদানির কারণে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ এই কোটি কোটি টাকার বাজার সহজেই দেশীয় সুস্বাদু ফলের হতে পারে। যা অনায়াসে আমাদের পুষ্টি ঘাটতি, রসনা তৃপ্তি, আর্থিক দৈন্য ঘুচাতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আম, লিচু, জাম, সফেদা, কাঁঠাল, গাব, তাল, তেঁতুল, জলপাই ছাড়াও বিভিন্ন ফল এবং ঔষধি গাছ হবে উন্নতমানের কাঠেরও উৎস।
আমাদের দেশে প্রচলিত যে কোনো কাঠ গাছের তুলনায় ফলের গাছে অন্তত তিন গুণ বেশি লাভ। পরিবেশের জন্যও উপকারী। আর স্থানীয়ভাবে ফলের পর্যাপ্ত জোগানই পারে ফরমালিনের মতো বিষাক্ত অভিশাপ থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
আরেকটি মজার কিন্তু হৃদয়বিদারক ব্যাপার হলো, অধিকাংশ কাঠের গাছে পাখির কোনো খাদ্য নেই। পাখির বাসা বাঁধা এবং ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নেওয়ার মতো উপযোগী ডালপালা নেই। তাই আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে দেশীয় পাখি, যা আমাদের ফসল উৎপাদনে ফেলছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। মানুষ বন উজাড় করে যতটা না পাখি তাড়িয়েছে- খাদ্যাভাবে, ফল না পাওয়ায় তারা নিজেরাই এ তল্লাটে আনাগোনা কমিয়ে দিয়েছে তার চেয়ে বহু গুণ।
দেশের ৪৭ ভাগ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পর্যাপ্ত ফল উৎপাদনের মাধ্যমে যার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। কাজেই দেশ এবং আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়ে শুধু কাঠের গাছের বদলে ব্যাপক হারে ফলদ বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন, যা এখন আমাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তাই কয়েকজন তরুণ মিলে গড়ে তোলা 'ফলদ বাংলাদেশ' সংগঠনটির আহ্বান- 'ফল গাছ লাগান, দেশ বাঁচান'। তাদের আহ্বান- আসুন, সবাই মিলে করি 'ফলদ বাংলাদেশ' আন্দোলন। আসুন প্রতি বর্ষায় নিজের ও আশপাশের বাড়ির আঙিনায় ফলের চারা রোপণ করি। হ
কেন ফলবৃক্ষ রোপণ
- দেশের পুষ্টি ঘাটতি কমানো।
- ফলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা।
- স্থানীয়ভাবে ফলের জোগান বৃদ্ধি করে ফলে বিষ বা ফরমালিন প্রয়োগ বন্ধ করা।
- পাখিদের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
- বৃক্ষকে শুধু কাঠ আর টাকা হিসেবে দেখার প্রবণতা ও কুফল হ্রাস করা।
- ফলবৃক্ষ মানুষের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে, আত্মীয়-বন্ধুদের ফলের নিমন্ত্রণ দেওয়া বা তাদের বাড়িতে গাছের ফল পাঠিয়ে দেওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। সেই সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনা।
- নিঃস্বার্থভাবে অপরের মঙ্গল কামনার অভ্যাস তৈরি করা।
- বিদেশি ক্ষতিকর বৃক্ষের বদলে আমাদের উর্বর মাটিতে উপযোগী বৃক্ষকে প্রাধান্য দেওয়া।
- ফলদ বৃক্ষের বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
- বিষমুক্ত বিশুদ্ধ পুষ্টি লাভের স্বাধীন ক্ষেত্র তৈরি করা।
পাঁচটি গাছকে 'না' বলুন
- ইউক্যালিপটাস। কারণ অতিমাত্রায় পানি শোষণকারী, নিম্নমানের কাঠ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
- রেইন-ট্রি। কারণ এই আগ্রাসী গাছ অন্য গাছকে বাড়তে দেয় না, ঝরা পাতা ফসল ও মাছের জন্য ক্ষতিকর, কাঠও নিম্নমানের।
- মেহগনি। এর ফল বিষাক্ত। পুকুরের পানিতে পড়লে মাছ মরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অত্যধিক রোপিত হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এর কাঠ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই।
- শিশু। কারণ এর কাঠ মাঝারি মানের, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্ক নেই।
- একাশিয়া। কারণ এর মাইক্রোস্কোপিক রেণু অ্যালার্জি/অ্যাজমার অনুঘটক, কাঠ মাঝারি মানের, গঠন আঁকাবাঁকা, বাংলাদেশে অতিরিক্ত রোপিত।
No comments:
Post a Comment